প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ২৩:৫৬
কালবৈশাখী ঝড়ে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাতে আটটার দিকে এই ঝড় শুরু হয়। ঘন্টাব্যাপী চলা ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভেঙে গেছে। এছাড়া দমকা হাওয়ার সাথে শিলা বৃষ্টিতে ফসল ও প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উপজেলা জুড়ে লোডশেডিং বিরাজ করছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দমকা হাওয়া ও শিলাতে বৃষ্টিতে উপজেলা ৫০ হেক্টর জমির ধান হেলে পড়েছে যার কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ১৪ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি, সাড়ে ১২ হেক্টর জমির পাট, সাড়ে ৯ হেক্টর জমির ভুট্টা ও সাড়ে ৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফলের বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অপরদিকে দমকা হাওয়ায় মুরগির খামারে ঘর ভেঙে পড়ে ১ হাজার ২০০ মুরগি মারা গেছে এবং চার হাজার ডিম ভেঙে গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি মুরগির খামারের চাল উড়ে গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তিলাই ইউনিয়নের ধামেরহাট বাজারে বড় আকারের দুটি জাম গাছ উপড়ে পড়ে। একটি জাম গাছ রাস্তার উপর পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং একটি ফটোকপির দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপর একটি গাছ উপড়ে পড়ে একটি ওষুধের দোকান, একটি লাইব্রেরী ও একটি টেইলার্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঝড়ে ওই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের কইকুড়ির পাড় এলাকার বিধবা কমলার ঘরের চাল উড়ে যায়। দক্ষিণ তিলাই গ্রামে খোরশেদ আলমের দোকান ঘর ভেঙে যায়। এছাড়া উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোতে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তিলাই ইউনিয়নের ধামেরহাট বাজারের ইউনুস আলী জানান, সড়কের একটি জাম গাছ উপড়ে পড়ে চারটি কক্ষ ভেঙে গেছে। এতে আনুমানিক তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত লাইব্রেরি মালিক আনিসুর রহমান জানান, লাইব্রেরির উপর গাছ পড়ে আসবাবপত্র ও মালামাল নষ্ট হয়ে আনুমানিক তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পাথরডুবি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের ফুলকুমার গ্রামের খন্দকার এগ্রো ফার্ম নামক একটি মুরগির খামারের একটি ঘর ভেঙে পড়েছে। মুসল্লী পাড়া গ্রামের মুসল্লী এগ্রো ফার্মের চাল ও বেড়া ভেঙে গিয়ে ৪ হাজার ডিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মইদাম সরকার পাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের খামারের টিনের চাল উড়ে গেছে।
খন্দকার এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারীরা রফিকুল ইসলাম জানান, দমকা হাওয়ায় খামারের ঘর ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ মুরগীর বাচ্চা মারা যায়। সবমিলেয়ে আনুমানিক ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মুসল্লী এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারীরা মাহবুবুর রহমান জানান, বাতাসে মুরগির খামারের চাল ও বেড়া ভেঙে পড়ে ৪ হাজার ডিম নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ওই ইউনিয়নের ভুট্টা চাষী মহিরুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। বাতাসে সমস্ত জমির ভুট্টা মাটিতে শুয়ে পড়েছে।
তিলাই ইউনিয়নের পাট চাষী আজিজুল হক জানান, আড়াই বিঘা জমিতে পাটবীজ বপন করেছি। বৃষ্টিতে বীজ বপন করা জমিতে পানি জমে গেছে। জমিতে পানি জমে থাকলে বীজ থেকে চারা গজাবে না। যেগুলো গজিয়েছে সেগুলোও পঁচে যাবে।
চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ধানচাষী ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শিলা বৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। ক্ষতির পরিমান এখন বোঝা না গেলেও পরে বোঝা যাবে।
তিলাই ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জানান, দমকা হাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের উপর গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে ইউনিয়ন পরিষদে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলায় কি পরিমান সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণের কাজ চলছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে।