প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২১, ১৯:৭
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
দীর্ঘ ২০ বছর পর শরীয়তপুরের বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পিপি অ্যাড. হাবিবুর রহমান মুন্সী তার ভাই মনির হোসেন মুন্সী হত্যা মামলার রায় দিয়েছে আদালত।
এ রায়ে ৬ আসামীর ফাঁসি, ৪ আসামীর যাবজ্জীবন ও ৩ আসামীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাকি ৪০ আসামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রায় প্রত্যাখান করেছেন বাদীপক্ষ।
রোববার (২১ মার্চ) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন এ রায় দেন।
অ্যাড. হাবিবুর রহমান মুন্সী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ছিলেন এবং তার ভাই মনির হোসেন মুন্সী শরীয়তপুর পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, শহীদ কোতোয়াল (৫০), শাহীন কোতোয়াল (৪৬), শফিক কোতোয়াল (৪০), মজিবর তালুকদার (৫২), শহীদ তালুকদার (৪০) ও সলেমান সরদার (৪৮)।
রায়কে ঘীরে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালত প্রাঙ্গনে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। এদিকে রায় প্রত্যাখান করে শহরের প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছে অ্যাড. হাবিবুর রহমান মুন্সী ও মনির হোসেন মুন্সী সমর্করা।
মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার এবং বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ।
তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ বিদ্রোহী প্রার্থী আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেন। ১ অক্টোবরের ওই নির্বাচনে সহিংসতার কারনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহন স্থগিত করা হয় এবং পরবর্তী ৮ অক্টোবর স্থগিত হওয়া কেন্দ্রে পূনরায় ভোট গ্রহনের দিন ধার্য করে নির্বাচন কমিশন। ৫ অক্টোবর নৌকার পক্ষে শহরের নিজ বাড়িতে নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করছিলেন অ্যাড. হাবিবুর রহমান। ওই সভায় বিদ্রোহী প্রার্থী আওরঙ্গ'র সমর্থক আওয়ামী লীগের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন অ্যাড. হাবিবুর রহমান ও তাঁর ভাই মনির মুন্সী।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমান বাদী হয়ে আওরঙ্গসহ মোট ৫৫ জনকে আসামি করে পালং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বিএনপি সরকার গঠন করে। ২০০৩ সালে সংসদ সদস্য আওরঙ্গ'র নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর বাদী উচ্চ আদালতে রিট করেন। ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ মারা যান। এরপর উচ্চ আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে পুলিশকে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। আওরঙ্গ সহ তিন আসামী মারা যাওয়ায় পুলিশ তদন্ত করে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপর চার্জ গঠন করে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২৮ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামী পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনা হয়। কয়েক দফায় রায়ের তারিখ পেছানোর পরে অবশেষে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের রায় ঘোষণা করে আদালত।
অ্যাড. হাবিবুর রহমান মুন্সীর বড় ছেলে শরীয়তপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ও জেলা জজ আদালতের এপিপি অ্যাড. পারভেজ রহমান জন বলেন, আমার বাবা ও চাচা হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত যাদের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে প্রমান করতে পেরেছি। আমাদের আশা ছিল তাদের ফাঁসির রায় হবে। কিন্তু তাদের অনেককে সাজা কমিয়ে দেওয় হয়েছে এবং অনেককে খালাস দেয়া হয়েছে। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
আসামী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মাসুদুর রহমান বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।