প্রকাশ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:৪৪
নওগাঁয় ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় এক প্রসূতির সিজারিয়ান করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের কারনে মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রসূতির পরিবার। নিহত ওই প্রসূতির নাম বন্যা খাতুন (২১)। সে নওগাঁ সদর উপজেলার চকপ্রাণ ( জোঁকাবিলা) মহল্লার মো.কোয়েল মন্ডলের স্ত্রী।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রসূতি বন্যাকে নিয়ে প্রথমে গতকাল ( শুক্রবার ) সকাল সাড়ে ৯টায় নওগাঁ শহরের সরকারি হাসপাতাল রোডের বেসরকারি মেট্রো হাসপাতাল সিজারিয়ান করানোর জন্য ভর্তি করা হয়। এর ১ঘন্টা পর ওই প্রসূতির কোন স্বাস্থ্য পরিক্ষা না করেই সিজারিয়ানের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়।
এর পর সিজারিয়ান করা হলে জন্ম নেয়া সন্তান ভালো থাকলেও প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরন করা শুরু হয়। এর পর পরিবারের স্বজনরা উদ্বেগ জানালে রক্তক্ষন বন্ধ করার জন্য পূনরায় প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। কিন্তু তবুও রক্তক্ষরন বন্ধ না হওয়ায় ডা: জেনিফা ইসলাম তিশা রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে নিতে পারেন বলে জানান।
এর শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান রোগীকে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা গেছেন। এর পর আজ ( শনিবার ) সকাল থেকে ওই প্রসূতির লাশ নিয়ে ডাক্তার ও মেট্রো হাসপাতালের পরিচালকের শাস্তির দাবিতে অবস্থান করেন।
নিহত প্রসূতি বন্যা খাতুনের বাবা মো.সামছুল আলম বলেন, শুক্রবার সকালে মেট্রো হাসপাতালে সিজারিয়ান করানোর জন্য আমার মেয়েকে ভর্তি করায়। কিন্তু অপারেশন করার আগে বেশ কিছু স্বাস্থ্য পরিক্ষা করার নিয়ম থাকলেও সেগুলো পরিক্ষা না করেই সরাসরি অপারেশ করেন ডাঃ জেনিফা ইসলাম তিশা ।
আমরা বার বার বলেছি যে ডাক্তার আপা আমার মেয়ের স্বাস্থ্য পরিক্ষা আগে করে নিন। কিন্তু তিনি উল্টো আমাদের ধমক দিয়ে বলেন যে আমি ডাক্তার আমার চেয়ে আপনারা বেশি জানেন না। তার পর সিজারিয়ান করার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে আমার ফুলের মত মেয়েটা ভুল চিকিৎসার কারনে মারা গেছেন। আমি ডাক্তারের কঠিন শাস্তি চাই।
নিতহ প্রসূতির ননদ হিরা খাতুন বলেন, প্রথমে সিজভরিয়ান করা হলে সন্তান ভালো থাকলেও আমার ভাবি বন্যার রক্তক্ষরন শুরু হয় এর পর রক্তরক্ষন বন্ধ করার জন্য আবার অপারেশন করলেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াই আমরা ডাক্তারকে জানাই এমন হচ্ছে কেন । তখন ডা: জেনিফা ইসলাম তিশা আমাদের উপর চড়াও হয়ে বলেন আপনারা রোগী নিয়ে এখন যেখানে ইচ্ছা গিয়ে চিকিৎসা করান। আমি আর কিছু করতে পারবো না ।
তিনি আরও বলেন, এর পর আমরা দ্রুত এম্বোলেন্স করে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার জানায় রোগী অনেক আগেই মারা গেছে। তার পর আমার রাতে লাশ ওখানেই এম্বোলেন্সে রেখে আজ সকালে নওগাঁর মেট্রো হাসপাতালে এসেছি লাশ নিয়ে এসেছি ভুল চিকিৎসার সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে । কিন্তু এখানকার ডাক্তার ও হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা আমাদের সাথে দেখা করেনি তারা কেউ। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করছি।
বিষয়টি নিয়ে ডাঃ জেনিফা ইসলাম তিশার ফোনে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। মেট্রো হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।এবিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি ) মো.সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন,
ভুল সিজারিয়ানে রোগী মারা যাবার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। যদি উক্ত ঘটনায় অভিযোগ করে তবে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।এবিষয়ে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাঃ এ,বি, এম, আবু হানিফ বলেন, ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। এঘটনায় সিভিল সার্জন অফিসে থেকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।