প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৬:৫৯
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আড়াই লাখ টাকার ভবনটির সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৩২ হাজার টাকা।জানা গেছে, জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাসের অনুপযোগী হওয়ায় আদিতমারী উপজেলার ৭টি বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেয় সরকার।
পরিত্যক্ত এসব ভবন বিক্রি করতে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশে উপজেলা প্রকৌশল দফতরকে মূল্য নির্ধারণের পত্র পাঠায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। যার প্রেক্ষিতে সকল ভবনের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উপজেলা শিক্ষা কমিটি।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের নির্ধারণ করা মূল্যে দেখা গেছে, হরিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল্য ৩৮ হাজার ৪৭৪ টাকা, ১নং দুরাকুটি কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ হাজার ৩৭২ টাকা, দেওডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৫ হাজার ৪২ টাকা,
মহিষখোচা বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ হাজার ২৬১ টাকা, ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ৫৭০ টাকা, ফলিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৯ হাজার ৮৩৪ টাকা এবং এ্যাঙ্গেলের (লোহার) কাঠামোর ভেলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বড় বড় দুইটি পাকা ঘরের মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ২৮ হাজার ৬২৮ টাকা মাত্র।
উপজেলা প্রকৌশল দফতরের বেঁধে দেয়া সরকারি মূল্য দেখে অনেকেই দেশকে শায়েস্তা খাঁর আমল বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সরকারি মূল্যের একটাকা বেশি দর হলেই বিক্রিতে বাঁধা থাকে না প্রকাশ্য নিলাম কমিটির। ফলে নেগোশিয়েট করে একটি চক্র এসব ভবন নাম মাত্র মূল্যে সরকারের কাছে ক্রয় করে ওই বিদ্যালয় মাঠেই ৬/৭ গুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে অনেক বড় অংশের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
৭টি ভবনের মধ্যে ৪টি প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের বেঁধে দেয়া নামমাত্র মূল্যে। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ভেলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি নেগোশিয়েটে ব্যর্থ হয়ে হট্টগোল পাকিয়ে কর্তৃপক্ষকে নিলাম স্থগিত করতে বাধ্য করান নেগোশিয়েট চক্রটি।
বিক্রিত ৪টি নিলাম থেকে জানা গেছে, মহিষখোচা বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি মূল্য ৩২ হাজার ২৬১ টাকার স্থলে নিলামে ৩৫ হাজারে বিক্রি করে নিলাম কমিটি। সেই কমিটির উপস্থিতিতে ওই ভবনটি ২ লাখ ৪১ হাজার টাকায় বিক্রি করেন নেগোশিয়েট চক্রটি।
দেওডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি নিলামে মাত্র ৩৬ হাজারে বিক্রি হলেও চক্রটি ওই মাঠেই বিক্রি করেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। একই ভাবে হরিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৪ হাজার ৯৭৪ টাকায় ও দুরাকুটি কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে নিলাম কমিটি। নেগোশিয়েট চক্রটি প্রকাশ্য নিলামের সিন্ডিকেট তৈরি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, সরকারি পণ্য ক্রয়ের সময় যেমন দাম ৬/৭ গুণ বাড়ানো হয়। অনুরূপভাবে বিক্রির সময়ও ৬/৭ গুণ কমানো হয়। সরকারি কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পকেট ভরাতে গোপনে নিলাম দেন এবং নেগোশিয়েট চক্রগুলোকে লালন করেন। এজন্যই সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিক্রিত মূল্য দেখে মনে হচ্ছে দেশের বাজারে শায়েস্তা খাঁর আমল চলছে।
নিলাম কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রকৌশল বিভাগ সরকারি মূল্য নির্ধারণ করেছেন। সেই মূল্যের সমপরিমাণ হলে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রিতে বাধা থাকে না। সরকারি মূল্যের উপর দাম পাওয়ায় তা বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতারা প্রকাশ্য ডাকে ডাকতে রাজি হয় না। তখন বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়।
ভবনের মূল্য নির্ধারণকারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, মনগড়া নয়, সরকারি সিডিউল মতেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবনগুলো দেখে মাপযোগ করেই সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি মূল্যে অতিক্রম হলেই প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির নিয়ম আছে।
প্রকাশ্য নিলাম কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, সরকারি মূল্যের উপর হলে নিলামে বিক্রি করা যায়। নিলামে বিক্রিত ভবনসমূহের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করেন উপজেলা প্রকৌশল দফতর। তবে নিলামে কোন ধরনের অনিয়ম হলে তা অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।