কালিগঞ্জে গাছে গাছে শোভা ছড়াচ্ছে আমের স্বর্ণালি মুকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৩রা জানুয়ারী ২০২৩ ০৬:৩০ অপরাহ্ন
কালিগঞ্জে গাছে গাছে শোভা ছড়াচ্ছে আমের স্বর্ণালি মুকুল

পৌষের কন কনে শীতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ অঞ্চলের গাছে গাছে প্রস্ফুটিত হতে শুরু করেছে আমের মুকুল। ফাল্গুনের আগেই শোভিত হতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের আগাম জাতের আমের বাগান। গাছে গাছে শোভা ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল। তাই বাগানে বাগানে বাড়তি পরিচর্যা শুরু করেছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার তীব্র শীতের প্রকোপ থাকার পরও আমের মুকুল এসেছে। তাদের ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ এলাকায় কিছু কিছু গাছে আগাম মুকুলের দেখা মিলেছে। ফাল্গুনের শুরুতেই এবার শতভাগ গাছে প্রস্ফুটিত হবে মুকুল। তাতে গোবিন্দভোগ গাছে মুকুল আসায় বেশ খুশি চাষিরা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভরা শীতে গাছে মুকুল আসা তেমন ভালো নয়। কারণ আগেভাগে আসা মুকুল ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ফলে শঙ্কা রয়েছে আমের ফলন কমে যাওয়ার। ঘন কুয়াশার কবলে না পড়লে, এসব মুকুলেও ভাল আম হবে। তবে নিয়ম মেনে মাঘের শেষদিকে যেসব গাছে মুকুল আসে, তাতে ভাল ফলন হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।


সরেজমিন দেখা গেছে, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মৌতলা, কুশুলিয়া, ধলবাড়িয়া, রতনপুর, মথুরেশপুর সহ সকল এলাকায় আম গাছে মুকুল আসতে শুরু হয়েছে। সোনারাঙা সেই মুকুলের পরিমাণ কম হলেও সৌরভ ছড়াচ্ছে বাতাসে। মুকুল আসা শুরু হবে বলে বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্থ হয়ে পড়েছেন বাগানের মালিক ও লিজ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। আমচাষি ও বাগান মালিকরা জানান, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ  অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে শীতের তীব্রতা বিরাজ করলেও আগাম জাতের সব গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। পৌষের মাঝামাঝিতেই গাছে মুকুল আসাতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪০ জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গোপালভোগ, হিমসাগার, কৃষাণভোগ, মল্লিকা, লক্ষণা, আম্রপলি, দুধসর, দুধকলম, বিন্দাবনী, আরজান, রানীপসন, সিঁন্দুরী। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ডিসেম্বরের শেষদিক থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় অবধি বারমাসি বা লোকাল জাতের আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। তবে এবার জানুয়ারির শুরুতেই মুকুল আসা শুরুহয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসেই মূলত আম গাছে মুকুল আসা শুরুহয়। শীতের তীব্রতা, তাপমাত্রা ও ঘন কুয়াশার কারণে গাছের মুকুল নষ্ট হতে পারে।



ফলন ও কদর ভালো হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন আমবাগান। ফলে দিনে দিনে এ অঞ্চলে আমচাষ বেড়েই চলেছে। শ্রমিক দিয়ে সারা বছর পরিচর্যা করা হয় আমবাগান। এতে বহু লোকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। বিনিয়োগ করা হচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। এদিকে, গাছে গাছে মুকুলের সমারোহে আমবাগান হাতবদল হতে শুরু করেছে। আমের মুকুল বেশি হওয়ায় এবার বেশি দামে বাগান বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রমের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সাতক্ষীরার বাগানগুলো কিনতে (এক মৌসুমের জন্য) শুরু করেছেন। সাতক্ষীরার আমের চাহিদা বিদেশে বেড়ে যাওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার ব্যবসায়ীরা বেশি আসছেন। স্থানীয় আমচাষিরা জানান, মুকুলের ওপর ভিত্তি করেই বাগান কেনাবেচা হয়ে থাকে। এজন্য আমগাছ পরিচর্যার সঙ্গে সঙ্গে মুকুল রক্ষায় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।



সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নার্সারি পর্যায়ে আম চারা উৎপাদন একটি ব্যবসায়, কৃষক পর্যায়ে আম চাষ লাভজনক কৃষি পণ্য, ব্যবসায়ী পর্যায়ে মৌসুমি ব্যবসায় হিসেবে বিবেচিত হলেও আমকে শিল্পের পর্যায়ে ভাবা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে যে পরিমাণ কোমল পানীয়, বিদেশি জুস, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি আমদানি করা হয়, আমকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে তা পণ্যে রূপান্তর করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব। বিশেজ্ঞরা বলছে যদি দেশে এ জাতীয় পণ্য রপ্তানি করতে না হয় তাহলেই তো দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা দেশেই থাকতো; তদুপরি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ফলে দেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তন ঘটতো। ফল বিশেজ্ঞরা বলছে, অর্থনৈতিক দিক থেকে আমের অবদান কোনো অংশে কম নয়, আন্তর্জাতিক মানের এই ফলটি শুধু পুষ্টি ও স্বাদের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।


সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.মো: জামাল উদ্দীন জানান বলেন, শুধু সাতক্ষীরা জেলায় পাঁচ হাজারেরও বেশি বাগানে আম চাষ হয়ে থাকে। এসব বাগানে চাষি রয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার জন। আমগাছে আগাম মুকুল আসায় চাষিদের বিভিন্ন বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।