সেন্টমার্টিনে একদিনে ১২০০ পর্যটকের এর বেশি নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বুধবার ২৯শে এপ্রিল ২০২০ ১১:২১ অপরাহ্ন
সেন্টমার্টিনে একদিনে ১২০০ পর্যটকের এর বেশি নয়

সেন্টমার্টিন ও ছেঁড়াদ্বীপের প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে প্রতিদিন সেন্টমার্টিনে এক হাজার দুইশ'র বেশি পর্যটক যেতে দেয়া হবে না এবং সপ্তাহে একদিন সব ধরনের পর্যটকের আগমন বন্ধ রাখা হবে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ও বেসরকারি পর্যটন ব্যবসায়ীরা এ সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ। করোনা দুর্যোগ শেষে এ সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে পর্যটন শিল্পের সংস্কারের দাবিতে এ সেক্টরের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে নবগঠিত 'সম্মিলিত পর্যটন জোট' এর নেতাদের সঙ্গে অনলাইনে মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে জাবেদ আহমেদ এ কথা বলেন। এ সময় জোটের আহবায়ক মোখলেছুর রহমান এ সেক্টরের সংস্কারের জন্য সম্মিলিত পর্যটন জোটের পক্ষে ১৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

প্রস্তাবনাগুলো হলো: বাংলাদেশের পর্যটন এলাকাগুলোর ধারণ ক্ষমতা নির্ণয়, পর্যটনসম্পদ শুমারি পরিচালনা, পর্যটন গ্রাম স্থাপন, পর্যটন প্রশিক্ষণ পলিসি তৈরি করা, জাতীয় পর্যটন গবেষণা সিস্টেম প্রবর্তন, ৬৪টি জেলায় ট্যুরিজম বোর্ডের অফিস স্থাপন, ২৪ ঘণ্টা ট্যুরিজম হেল্প ডেস্ক ও সমন্বয় শাখা চালু, ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্টিং সিস্টেম প্রবর্তন, বঙ্গবন্ধু পর্যটন পদক ও জাতীয় পর্যটন ট্রফি প্রবর্তন, প্রান্তিক পর্যটনকর্মীদের জন্য আপদকালীন তহবিল গঠন, পর্যটন রপ্তানির বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ পর্যটনের কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ, ট্যুরিজম আইকন নির্ধারণ, জলাভূমি পর্যটনের নীতিমালা প্রণয়ন, এবং সর্বোপরি ধর্মীয় পর্যটনের আওতায় বিশ্ব ইজতেমা, বুদ্ধিস্ট সার্কিট ট্যুরিজম এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সীতাপিঠ ও অন্যান্য আকর্ষণগুলিকে গড়ে তোলা।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ হাসান বলেন, ১৭টি প্রস্তাবনার সবকটিই এ সেক্টরের উন্নতির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এগুলো বাস্তবায়নে তিনি চেষ্টা করে যাবেন।

পর্যটন বাংলাদেশের ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’ এবং এটি আমাদের ৩য় ক্যাটাগরির আয়ের মাধ্যম বলে উল্লেখ করে জাবেদ হাসান বলেন, এই শিল্পে ইতোমধ্যে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় সাধারণ মানুষ এমনকি নীতি নির্ধারক মহলও যথাযথভাবে অবগত নন। তাই মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে প্রচারণা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

পর্যটনের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে পর্যটনের উন্নয়নে নানাভাবে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের পর্যটন এখন টেক-অফ পিরিয়ডে আছে। তাই এখনি সময় এর জন্য ভালো কিছু করার।
এ সময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (বিপণন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ), আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের জানান, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড একটি পূর্ণ ওয়েবসাইট আপ করতে যাচ্ছে। যেটাকে পর্যটনের স্যাটেলাইট একাউন্ট সিস্টেমে রূপ দেয়া হবে।

সম্মিলিত পর্যটন জোটের আহবায়ক মোখলেছুর রহমানের সঞ্চালনায় অনলাইনে আয়োজিত এ সভায় জোটের স্কলার্স উইংয়ের মধ্য থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. এনায়েত হোসেন, কুষ্টিয়া ইসলামী  বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাহবুব হোসেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর মো. আবদুল হামিদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মইনুল হাসান, প্রিমিয়ার ইউনির্ভাসিটি, চট্টগ্রামের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রকিবুল হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পার্সোন্যাল ম্যানেজমেন্টের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নোমান আহমেদ, সেন্টার ফর ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ নাসিমুল ইসলাম নাসিমসহ জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি লকডাউনের কারণে পর্যটন এলাকাগুলোতে পর্যটক সমাগম কমার পর থেকে প্রাণীর বিচরণ বেড়ে যাওয়াসহ বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে নৈসর্গিক এলাকাগুলোতে। যার প্রেক্ষিতে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করে পর্যটন নিয়ে নতুন করে ভাবনার দাবি উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এমন সময় গত ৯ এপ্রিল টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করাসহ পর্যটন শিল্পের সংস্কারের দাবিতে সংশ্লিষ্ট ৯টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় পর্যটন জোট। বর্তমানে এ জোটের সঙ্গী হয়েছে ১১টি সংগঠন।