সিরাজগঞ্জের ‘বেহুলা সুন্দরীর স্মৃতি বিজড়িত জিয়ন্ত কূপ’ সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
খোরশেদ আলম, উপজেলা প্রতিনিধি তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশিত: শনিবার ১৯শে অক্টোবর ২০১৯ ১২:১৪ অপরাহ্ন
সিরাজগঞ্জের ‘বেহুলা সুন্দরীর স্মৃতি বিজড়িত জিয়ন্ত কূপ’ সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক চলনবিল অঞ্চলে অবস্থিত বিনসাড়া গ্রামে কিংবদন্তি নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর স্মৃতি বিজড়িত জিয়ন্ত কূপের ভিতরে পাইকর গাছ দিয়ে কূপের সৌর্ন্দয্য এখন বিলুপ্তির পথে প্রায় এটা সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরী দরকার বলে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী ও চান্দের বাজারটি সরকারী বা বে-সরকারী উদ্দ্যোগে হতে পারে একটি পিকনিক স্পট বা পর্যটন কেন্দ্র। 

ষোলশ শতাব্দীর প্রাচীন এই লোক কাহিনীর বিশ্ব নন্দিত নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তৎকালীন নিচানীনগর নামে পরিচিত ছিল, কালের বির্বতনে বর্তমানে বিনসাড়া গ্রাম নামে পরিচিত। বাছোবানিয়ার এক মাত্র রুপসী কন্যা বেহুলা সুন্দরী। রুপে গুণের অধিকারিনী বেহুলা সুন্দরী তাঁর বাবা বাছোবানিয়ার সাথে প্রায়ই বাজার করতে যেত চান্দের বাজারে। বেহুলা সুন্দরী যে বাজারে বাজার করতে যেত সে বাজারে প্রাচীন নাম চান্দের বাজার। প্রায় ৩শ বিঘা জমির উপরে বাজার বসতো বর্তমানে এটা তাড়াশ উপজেলার বস্তুল গ্রাম নামে সকলের কাছে পরিচিত। অপর দিকে বগুড়ার মহাস্থানের গোকুল গ্রাম থেকে চান্দু সওদাগর ওরফে চাঁদ সওদাগর ও তাঁর ছেলে লক্ষেণদারকে সঙ্গে নিয়ে প্রায়ই চান্দের বাজারে ব্যবসার জন্য আসত। হঠাৎ করে একদিন চান্দের বাজারে বেহুলা সুন্দরীর সাথে দেখা লক্ষেণদার সওদাগরের। 

প্রথম দেখাতেই দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনে জন্য মনের মধ্যে দু’জনার ভালবাসার সংকেত দেয়, এভাবেই তাদের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হয়। যে বটগাছের নীচে বসে তারা গল্প করত ও কথাবার্তা বলত নিজের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করত সেই বটগাছটি এখনও প্রায় ৫ বিঘা ভূমি জূড়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু নেই সেই দু’জন যাদের জন্য এ কাহিনী রচিত হয়েছে। কালের বির্বতনে চান্দের বাজার এখন বস্তুল গ্রাম নামে এলাকাতে বিশেষ পরিচিত লাভ করেছে। এখানে, একটি কওমী মাদ্রাসা, জামে মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, টেকনিক্যাল স্কুল ও মহাবিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও গ্রামীণ ব্যাংক সহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবারের এখানে হাট বসে, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী  তাড়াশ উপজেলার বস্তুল গ্রামে খাস ভূমির পরিমাণ প্রায় ৭ শত বিঘা। এলাকার একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এ সকল খাস ভূমি দখল করে নিজেদের দখলে নিয়ে আছে।

এদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের নিজের নামে ভূঁয়া কাগজ পত্র তৈরী করে নিয়েছে। অনেকেই ভিপি সম্পত্তির উপর দালান কোঠা তৈরী করে বসবাস করছে। এলাকার গরীব দুঃখীদের কল্যাণে বস্তুলের ৭শত বিঘা খাস ভূমির কিছূ অংশে সরকারের আশ্রয়ণ কেন্দ্র তৈরী করা হলেও অধিকাংশ জায়গা প্রভাবশালীরা দখল করে আছে। সরকারীভাবে উক্ত খাস ভূমি গুলো লীজ দেওয়া হলে সেখান থেকে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে। আদিকাল থেকে অদ্যবধি চান্দের বাজারের মেলায় হাজার হাজার মানুষ আসতো এবং বট গাছের মাঝখানে শিব মন্দিরে মানত করে অনেকেই পূঁজা করত। চান্দের বাজারের বট গাছের উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। ৫৬০টি বর দ্বারা বেহুলা ও লক্ষেণদারের বসে থাকার আসন ঘিরে রেখেছে। বট গাছের বর গুলো দেখতে অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা। দর্শনার্থীরা বট গাছের বর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখে। 

কিন্তু বসার জায়গা না থাকায় আগত দর্শকদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়। সরো জমিনে তথ্য অনুসন্ধানে কথা হয়, বস্তুল গ্রামের মোঃ আকবর আলীর, রফিকুল ইসলাম,শ্রী বিজয় কৃষ্ণ, শ্রী সয়েন চন্দ্র উরাও ও মোঃ আব্দুল হক এবং লাউশন গ্রামের মোঃ আলমগীর হোসেন এর সাথে তারা সকলে বলেন যে, ইতিমধ্যে এলাকার কিছূ প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ কিছু বর কেটে নিয়ে গেছে। এলাকাবাসী মনে করেন সরকারীভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসে চান্দের বাজারে মেলা ও এর প্রাচীন ঐতিহ্য। এখনও অনেক দুর থেকে অনেকে ওই বট গাছটি দেখতে পায়। তাছাড়া বেহুলা সুন্দরীর স্মৃতি বিজড়িত নিচানীনগর বিনসাড়াতে জিয়ন্ত কূপ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। জিয়ন্ত কূপের বৈশিষ্ট হচ্ছে একের ভিতর ৩টি কূপ বিদ্যমান। যা দুর -দুরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। প্রতিদিন শত শত দর্শক জিয়ন্ত কূপ দেখার জন্য তাড়াশের বিনসাড়া গ্রামে আসে। এখানে জৈষ্ঠ্য মাসে ৩ দিন ব্যাপী চান্দের মেলা বসে। 

জানা যায় বহু দুর থেকে দর্শনার্থীরা জিয়ন্ত কূপ স্বচোখে দেখার জন্য ও দুধ কলা দিয়ে মানত করতে আসে।অত্র এলাকাবাসীর জনসাধারণের প্রাণের দাবী তাড়াশের ওই দুটি স্থানকে পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে নিয়ে সরকারী ভাবে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ সংরক্ষণের মাধ্যমে আধুনিকভাবে আকষর্ণীয় করে তোলার দাবী জানিয়েন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর