কেবল ঈদুল আযহার ছুটিই নয়, এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে সম্প্রতি চালু হওয়া পদ্মা সেতু। এই সেতু পার হয়ে ঈদের লম্বা ছুটি উপভোগে দখিনের পর্যটন কেন্দ্রে ছুটবেন ভ্রমন প্রিয় মানুষ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের ভীড় তেমন দেখা না গেলেও কোরবানীর ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে উপচে পড়া ভীড় থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা পর্যটন ব্যবসায়ীদের। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকতের পরিবেশ প্রতিবেশ, পৌর এলাকার সড়কসহ আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গুলোর চাকচিক্য বাড়ানো হয়েছে। ঈদুল আযহার একদিনের ছুটি শেষ করেই পর্যটন কেন্দ্রের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজে ফিরতে বলা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বিরতিহীনভাবে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজগোছের কাজ। কোথাও চলছে ধোয়া মোছা, আবার কোথাও ঝলসে যাওয়া দেয়ালে রঙয়ের প্রলেপ মাখানো হচ্ছে।
কুয়াকাটার অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের মতে ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষের প্রবল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন পদ্মা সেতু। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মর্যাদা ও গর্বের এই সেতু পার হয়ে দখিনের প্রধানতম এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ভ্রমণের আনন্দকে পর্যটকরা এবার হাতছাড়া করবেন না। আবাসিক হোটেল বুকিংয়ের ধরণ থেকে সহজেই অনুমেয়। কুয়াকাটা এবং তার আশেপাশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের পরিবেশ ও সেখানকার ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি বিগত বছরগুলোর চাইতে অনেক বেশি।
ফি বছর ঈদের ছুটি উপভোগে কুয়াকাটায় পর্যটকের ভির থাকলেও এবার সকল পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আর এই বিপুল সংখ্যক ভ্রমন প্রিয় মানুষদের কুয়াকাটা আগমনকে সহজ করে দিয়েছে ফেরিবিহীন উন্নত সড়ক ও হয়রানী মুক্ত নৌ পথ। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে বিলাস বহুল এসি-ননএসি বাস। পাশাপাশি নদী পথেও থাকছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত লঞ্চ। এসব লঞ্চ রাজধানীর সদরঘাট থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী ও কলাপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসছে। ভাড়াও আগের তুলনায় কম।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু জানান, এবার ঈদুল আযহার ছুটিতে অসংখ্য পর্যটকের আগমনের সম্ভাবনাকে ঘিরে ট্যুর গাইড সদস্যরা প্রস্তুতি নিয়ে আছে। হবেন ব্যবসায়িকভাবে লাভবানও। সেবা ও আতিথেয়তার দিক থেকে একটু ভিন্নতা যোগ করবেন বলেও জানান। কুয়াকাটা সৈকতের ছাতা বেঞ্চ ব্যবসায়ী আব্বাস কাজী জানান, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নতুন ছাতা বেঞ্চ সংযোজন করেছেন। পরিবর্তন করা হয়েছে পুরানো বেঞ্চ-ছাতা।
পর্যটকরা ভ্রমণে এসে সৈকতের সৌন্দর্য অবলোকনে মুগ্ধ হতে এমন উদ্যেগ বলে জানান সৈকতের এই ব্যবসায়ী। ঝিনুক ব্যবসায়ী শিমুল জানান, ঈদের পরে অগনিত পর্যটকদের কথা চিন্তা করে পুরোনো পণ্য সরিয়ে নতুন পণ্য দোকানে আমদানী করা হয়েছে। শিমুলের মতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় তেমন একটা পর্যটক না এলেও ঈদের ছুটি উপভোগের কমতি থাকবে না। রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কলিম মাহমুদ জানান, খাবার হোটেল গুলোর বেশিরভাগই ধুয়ে মুছে রঙ করে সাজানো হয়েছে।
বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে আগে থেকে মাছ মাংস মজুদ করা হচ্ছে যাতে পর্যটকদের খাবারের চাহিদা পূরণ করা যায়। আবাসিক হোটেল সৈকতের জেনারেল ম্যানেজর আবজাল গাজী জানান, তাদের হোটেল ধুয়ে মুছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। পুরাতন বেডসীট ও আসবাবপত্র পরিবর্তন করে রুমের সাজসজ্জা বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের হোটেলের ৭৫ ভাগ রুম আগাম বুকিং হয়েছে।
একই কথা জানান, কানসাই ইন’র এমডি ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমীন। কুয়াকাটার থ্রী স্টার মানের আবাসিক হোটেল সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাসের ব্যবস্থাপক আল আমিন জানান, ইতিমধ্যে পরিস্কার পরিচ্ছনতার কাজ শেষ করা হয়েছে। তাদের রিসোর্ট এবং ভিলার ৮০ ভাগ কক্ষ ১২/১৩ এবং ১৬ থেকে ১৭ জুলাই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকরা প্রতিদিনই রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করছেন বলেও জানিয়েছেন।
কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল আযহার ছুটিতে অসংখ্য পর্যটক কুয়াকাটায় আসবেন। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারনে এবার ঈদে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন নিয়েও চিন্তিত তিনি।
একই প্রসঙ্গে কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব জানান, কমিউনিটি ট্যুরিজমকে উৎসাহীত করার সময় এসেছে। এতে পর্যটকরা নিরাপত্তা ও সেবা দু’টোই পাবেন। কুয়াকাটায় ছোট বড় মিলে দেড় শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে সর্বোচ্চ ১৫-২০ হাজার পর্যটক থাকতে পারবেন। অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপ সামলাতে তাদের হিমসিম খেতে হবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, কুয়াকাটা পর্যটনের অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি পর্যটকের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর খুব অল্প সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুয়াকাটায় আসতে পারবেন পর্যটকরা। দেশের অন্য সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কুয়াকাটা সৈকতে আসতে ৪-থেকে ৫ ঘন্টা সময় বাঁচবে। এজন্য কুয়াকাটায় পর্যটকের আগমন দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। আর এসব আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মান নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।