মেজবাহ শিমুল একজন সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক, যিনি তার সাহিত্যে সমাজের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা এবং মানবিকতার এক অসাধারণ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তার লেখালেখি শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা সমাজের কোনো নির্দিষ্ট অংশের চিত্র তুলে ধরেনি, বরং তা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও মানবিক দ্বন্দ্বের গল্প। মেজবাহ শিমুলের সাহিত্যে মানুষের জীবনের সংগ্রাম, নিপীড়ন, মানবিকতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন উঠে আসে, যা পাঠকদের চিন্তা ও অনুভূতির নতুন মাত্রা দান করে।
মেজবাহ শিমুলের প্রথম উপন্যাস ‘মরা নদী বলেশ্বর’ তার সাহিত্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই উপন্যাসে তিনি নদী এবং মানুষের জীবনসংগ্রামের মাঝে সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। নদী যেমন মানুষের জীবনের অঙ্গ, তেমনি মানুষের জীবনও নদীর মতো প্রবাহিত, কখনো শান্ত, কখনো তীব্র। এই উপন্যাস পাঠকের মনে এক গভীর ছাপ ফেলে, যা তাদের নিজস্ব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত করে।
তাঁর ছোটগল্প ‘অভিমানী সেই মেয়েটি’ নারী জীবনের আবেগ এবং সংগ্রামের এক মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরে। গল্পটির মধ্যে একজন নারীর কঠিন পরিস্থিতি এবং তার জীবনের পথে চলার সংগ্রাম দারুণভাবে ফুটে ওঠে। মেজবাহ শিমুলের লেখা, বিশেষত নারীদের সম্পর্কিত, এমন মানবিক গল্পসমূহ পাঠককে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
শিশুতোষ সাহিত্যেও তার অবদান অনস্বীকার্য। ‘মানুষ হওয়ার কবিতা’ নামক শিশুসংকলনটি মানবিকতার মূলমন্ত্রে রচিত। এই বইটি শিশুদের মধ্যে ভালবাসা ও সহানুভূতির অনুভূতি জাগাতে সাহায্য করে, যা সমাজের প্রতি এক ইতিবাচক ধারণা তৈরি করে।
অন্যদিকে, ‘রাজ্য ও নৈরাজ্যের গল্প’ তার সাহসী রাজনৈতিক ভাবনা এবং ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী লেখার প্রতিফলন। এটি সমাজের ন্যায় বিচারের শূন্যতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি গভীর চিত্র, যা একসময় নিষিদ্ধ হলেও তার সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য প্রশংসিত। এটি তার রাজনৈতিক সচেতনতা এবং সাহিত্যে শক্তিশালী প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের একটি উদাহরণ।
তার পঞ্চম গ্রন্থ ‘স্বপ্নদ্রোহী’ আরো একবার তার সাহিত্যের শক্তির প্রমাণ, যেখানে তিনি সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন। সমাজের অগণিত অবিচারের বিরুদ্ধে তার এই সংগ্রামী মনোভাব পাঠকদের জন্য এক শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে।
বর্তমানে, মেজবাহ শিমুলের ‘সীমান্ত বিধবা’ উপন্যাস প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে, যা সীমান্তের দুঃখ-দুর্দশা এবং মানুষের জীবনের অদ্ভুত সংগ্রামকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরবে। এই উপন্যাস এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের জীবন সংগ্রামের গল্প শোনাবে, যা তার লেখনীর এক নতুন অধ্যায়।
মেজবাহ শিমুলের সাহিত্যে মানবিকতা, সংগ্রাম এবং প্রতিবাদের এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটে উঠেছে। তার সাহিত্য পাঠকদের মাঝে এক নতুন চিন্তা ও সামাজিক সচেতনতা জাগাতে সক্ষম। তার সাহিত্যে আজকের সময়ের বাস্তবতা, নিরন্তর সংগ্রাম এবং মানবিক মূল্যবোধের গভীর প্রতিফলন রয়েছে, যা দেশের নানা অংশে সমাদৃত হচ্ছে। মেজবাহ শিমুলের লেখার প্রতিটি পৃষ্ঠায় এক নতুন পথের সূচনা, যা তার সাহিত্যে নির্ভীক প্রতিবাদ এবং স্বাধীন চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ হিসেবে দাগ কাটবে।
মেজবাহ শিমুলের জন্ম পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মা আছিয়া খাতুন। ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে ষষ্ঠ মেজবাহ। স্ত্রী জয়নব আক্তার ও শিশু কন্যা উম্মে মাহজুবা আয়েশা কে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসার। কিছুটা ভাবলেশহীন জীবন। তবে দেশ ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে আপোসহীন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।