খেজুর গুড়ের হারানো গৌরব ফিরে পেতে ফরিদপুরের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আবু সাঈদ খন্দকার, জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার ৫ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
খেজুর গুড়ের হারানো গৌরব ফিরে পেতে ফরিদপুরের উদ্যোগ

ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড় বিলুপ্তির পথে, তবে আসছে পুনর্জাগরণের আশা। ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একসময় শীতের মৌসুমে হাজার হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় প্রস্তুত করা হতো। সেই সুস্বাদু খেজুর গুড়ের নাম দেশজুড়ে পরিচিত ছিল। কিন্তু আজ এই গুড় কেবল স্মৃতিতে রয়ে গেছে।


নুরপুর, বাইশাখালী, খাড়াকান্দি, হোগলাকান্দি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গাছগুলো অবহেলা ও অযত্নে দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহ্যবাহী পেশাটি হারিয়ে যাওয়ার জন্য মূলত গাছিদের সংকট এবং জ্বালানির উচ্চমূল্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


গাছি মোয়াজ্জেম খরাদি বলেন, “আমাদের বয়স হয়েছে, এখন আর গাছে উঠতে পারি না। নতুন প্রজন্মকে এই কাজে উৎসাহী করতে পারছি না। অটোরিকশা চালিয়ে বেশি আয় হওয়ায় তারা এই পেশায় আসতে চায় না।”


অন্য একজন গাছি, হান্নান শেখ, আক্ষেপ করে বলেন, “খেজুর গুড়ের জন্য যে পরিশ্রম লাগে, সেই তুলনায় বাজারমূল্য খুব কম। জ্বালানির দামও বেড়ে গেছে। তাই গুড় বানানো এখন লোকসানের কাজ।”


গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি কাশেম আলী বলেন, “আগে পুরো গ্রামে খেজুর রস আর গুড় তৈরির ধুম লেগে থাকত। এখন এসব দেখতে পাই না। তবে শুনেছি সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। যদি কার্যকর হয়, তাহলে হয়তো পুরনো ঐতিহ্য ফিরবে।”


স্থানীয় বাসিন্দা হোসেনা বেগমের মতে, “যে সুস্বাদু গুড় আমরা খেতাম, তা এখন আর পাওয়া যায় না। তবে খেজুরগাছের যত্ন নিলে আবার গুড় তৈরি শুরু করা সম্ভব। প্রশাসনের এই উদ্যোগ ভালো লেগেছে।”


ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী জেলায় আড়াই লক্ষ খেজুরগাছ আছে। এ বছর প্রায় এক লক্ষ গাছ থেকে রস সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গাছিদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করায় স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের আশা, এই কার্যক্রম চালু থাকলে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড় শিগগিরই আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং বাজারে সহজলভ্য হবে।


কৃষি কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, “গাছিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছি। যদি এই উদ্যোগ সফল হয়, তাহলে ফরিদপুরের খেজুর গুড় তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।”