পটুয়াখালী, ১৫ নভেম্বর: ২০০৭ সালের আজকের এই দিনে, রাত নয়টায় সুপার সাইক্লোন সিডর পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সহ সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ইতিহাসের অন্যতম প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, যা পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব সৃষ্টি করে। সিডরের আঘাতে পটুয়াখালী জেলায় ৬৭৭ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং আহত হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে ২ হাজার মানুষ হয়ে যায় পঙ্গু। এর পাশাপাশি প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
এই ধ্বংসযজ্ঞের পর, ৫৫ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়, ৩৫১টি স্কুল ও কলেজসহ ১৫০০ মসজিদ ও মন্দির ধ্বংস হয়। প্রায় ৫ লক্ষ একর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ২৫০ হেক্টর বনাঞ্চল পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। সিডরের তান্ডবে ১৮ হাজার গবাদি পশু মারা যায়, এবং ৪১২টি ড্রেনেজ স্লুইজসহ বেড়িবাঁধের বেশ কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। আজও, ১৪ বছর পর, পটুয়াখালীর সমুদ্র উপকূলে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধগুলো অরক্ষিত রয়েছে, এবং চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারের অভাব রয়েছে।
সিডরের প্রভাব আজও স্মৃতিতে গভীর দাগ কাটে পটুয়াখালীর উপকূলবাসীর মধ্যে। মৎস্য বন্দর মহিপুরের আব্দুর রহিম বলেন, "আমি সত্তরের দশকের বন্যার কথা শুনেছি, কিন্তু সিডর নিজের চোখে দেখেছি। তখন আমাদের ঘর-বাড়ি, গাছপালা সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকে সব কিছু তলিয়ে যায়।"
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকার বাসিন্দা আজিমন বলেন, "সিডরের কথা মনে পড়লেই বুকের মধ্যে আঁতকে উঠি। হঠাৎ সামনে শুধু পানি আর পানি। সবকিছু ভেসে গিয়েছিল। আমাদের ঘর-বাড়ি, মালামাল সব পানির সঙ্গে চলে গিয়েছিল। বেরীবাঁধের কাছেই পানি উঠে ছিল, আরও কিছু সময় থাকলে সবকিছু তলিয়ে যেত। আল্লাহর রহমতে কিছু বেঁচে গেছি।"
এই দিনটিকে স্মরণ করে, প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মোমবাতি প্রজ্বালন সহ নানা কর্মসূচি আয়োজন করে থাকে। এটি শুধুমাত্র সিডরের বিভীষিকাকে স্মরণ করার জন্য নয়, বরং এলাকার অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও ভবিষ্যত প্রস্তুতির বিষয়েও একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে কাজ করে।
এ বছরও, স্থানীয় জনগণ একযোগভাবে সিডরের স্মৃতি চারণে অংশগ্রহণ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিডরের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় এলাকায় কার্যকর বেড়িবাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার এবং পর্যাপ্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা এখনো অপরিহার্য।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।