পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী বারবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। ২০২৪ সালকে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এক প্রতিবেদনে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় হামলা উল্লেখযোগ্য, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠন, তবে সরকার এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বলতা ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয় তৎপরতা এসব হামলা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর শক্ত অবস্থান থাকায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়ই হামলার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা দুর্বলতার কারণে সন্ত্রাসীরা আগেভাগে চিহ্নিত হচ্ছে না, ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
এদিকে এসব হামলার জেরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় সামরিক অভিযানের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে জঙ্গি তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক সফল অভিযান চালালেও হামলার আশঙ্কা কমছে না।
তবে এই বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক সংস্থা আইএসপিআর থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। দেশটির সরকার ও সামরিক বাহিনী বরাবরই সন্ত্রাস দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা ক্রমশ বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতাও জঙ্গিবাদ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থীরা আরও সংঘবদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের যুবসমাজের মধ্যে কর্মসংস্থানের অভাব ও শিক্ষা খাতে অব্যবস্থাপনার ফলে তারা সহজেই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রলোভনে পড়ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মহলও পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলো বিশেষ নজর রাখছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর। বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দেশটির নিরাপত্তা ইস্যুতে গভীর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী একাধিক পদক্ষেপ নিলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে সন্ত্রাস দমনে শক্তিশালী নীতি গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।