শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বৈষম্য বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘‘নারীর প্রতি সহিংসতা: সমাধানে ১৬ দিনের প্রচারাভিযান’’ এর অংশ হিসেবে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) ও ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি) এর আয়োজনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে দিনব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে চা শ্রমিকদের নিয়ে প্রকাশিত একটি বিশেষ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ‘‘টি ওয়ার্কার্স অব বাংলাদেশ: রিয়ালিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’’ (বাংলাদেশের চা শ্রমিক: বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ) শিরোনামের এই বইটি ১৫২ পৃষ্ঠায় চা শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, কর্মপরিবেশ, মজুরি, স্বাস্থ্য সেবা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে গভীর আলোচনা করেছে।
সেড-এর পরিচালক পিলিপ গাইন মুল প্রবন্ধে চা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মজুরি বৈষম্য এবং শ্রম আইন সংস্করণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "চা শিল্পের মালিকানা এবং শ্রমিকদের অংশীদারিত্বের জন্য নতুন মডেল গ্রহণ করা জরুরি, বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার মতো ছোট আয়তনের চা বাগান ব্যবস্থায়।"
আলোচনায় চা শ্রমিকদের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া এবং নারীদের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শ্রীমতি বাউরি বলেন, "চা বাগানের নারী শ্রমিকদের জন্য কোনও শৌচাগার বা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, যা তাদের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ।" তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, "এই ধরনের লঙ্ঘনের অবসান হওয়া প্রয়োজন।"
বিসিএসইউ-এর সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, "চা বাগানে মদের দোকান চালানো নারী শ্রমিকদের জন্য একটি বড় সমস্যা। কাজ শেষে মদ্যপ স্বামীর হাতে নারীরা সহিংসতার শিকার হন, যা খুবই দুঃখজনক।" তিনি সরকারের কাছে দ্রুত এই মদের দোকান বন্ধের দাবি জানান।
শ্রীমঙ্গল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ—মহাপরিদর্শক মোহাম্মাদ মাহবুবুল হাসান বলেন, "শ্রমিকদেরও আরও সচেতন হতে হবে। আইনের লঙ্ঘন হলে থানায় অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে, আর শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের পাশে দাঁড়াবে।"
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সুয়েব হোসেন চৌধুরী, সাপ্তাহিক শ্রীমঙ্গল পরিক্রমার সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী, সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী, এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মীরা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চা শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
এটি ছিল একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা, যা চা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করল।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।