স্ত্রীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্কুলশিক্ষকের আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি - বরগুনা
প্রকাশিত: রবিবার ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২১ পূর্বাহ্ন
স্ত্রীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্কুলশিক্ষকের আত্মহত্যা

বরগুনার আমতলী উপজেলায় এক স্কুলশিক্ষক স্ত্রীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার সকালে হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যাকারী ওই শিক্ষকের নাম নজরুল ইসলাম (৩৮)। 


নজরুল ইসলাম হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের মো. খালেক খানের ছেলে এবং আমতলী সদর ইউনিয়নের উত্তর টিয়াখালী ছোবাহান বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। দুই বছর আগে নজরুল ইসলামের বিয়ে হয় একই গ্রামের দুলাল ভূঁইয়ার মেয়ে খাদিজা বেগমের সঙ্গে। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল, যা শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজিক পরিণতির দিকে গড়ায়।


জানা যায়, শুক্রবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তীব্র ঝগড়া হয়। শনিবার সকালে খাদিজা বেগম তার ভাশুর ফেরদৌস খানকে বলেন, "আমি বাবার বাড়ি চলে গেলাম, আপনার ভাই আমাকে মারধর করেছে।” এই কথা বলেই তিনি বাবার বাড়ি চলে যান। 


স্থানীয়রা জানান, ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নজরুল ইসলামকে আমগাছের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান তারা। তার শরীরের কাপড়ে পেঁচানো একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়, যেখানে লেখা ছিল, "বউয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চলে গেলাম।” 


এ ঘটনায় আমতলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই স্ত্রী খাদিজা বেগম গা ঢাকা দিয়েছেন, এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 


নজরুল ইসলামের বড় ভাই মো. ফেরদৌস খান দাবি করেন, "আমার ভাইকে তার স্ত্রী বিয়ের পর থেকেই নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। সেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীর শাস্তি চাই।” 


আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, "মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


এই মর্মান্তিক ঘটনাটি স্থানীয় এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নজরুল ইসলাম একজন সৎ ও পরিশ্রমী শিক্ষক ছিলেন। তার এমন আত্মহত্যার ঘটনা সবাইকে বাকরুদ্ধ করেছে। 


পারিবারিক কলহ এবং মানসিক নির্যাতনের ফলে এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা সমাজের জন্য একটি সতর্কসংকেত। মানসিক সহায়তা এবং সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাবাসীর দাবি, এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে সঠিক বিচার নিশ্চিত করা হোক। 


এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় সমাজকর্মীরা পরিবারগুলিকে মানসিক সহায়তা এবং কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগী হচ্ছেন। তারা মনে করেন, পারিবারিক কলহের কারণে এমন মৃত্যু এড়াতে সমাজের সকলকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।