কাউকে বাদ দিয়ে নয়, তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায় অথাৎ হিজড়া জনগোষ্ঠী সমাজের অংশ হয়েও এরা পিছিয়ে পড়ছে কেবলমাত্র লিঙ্গগত বৈষম্যের কারণে। সাংবিধানিক অধিকার, এদের ক্ষেত্রে অনেকাংশে উপেক্ষিত। অথচ হিজড়া জনগোষ্ঠী এ দেশ ও মাটির কোন না কোনও বাবা মায়ের সন্তান। তাই সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি ও সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা, রাখাইন শিক্ষার্থীদের সাথে জেন্ডার সেনসিটাইজেশন বিষয়ক আলোচন সভা ও সৈকত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান। তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বৃহন্নলা’এসব ব্যতিক্রমি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দুইদিন ব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পর্যটকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সোমবার সকালে সংগঠনের সদস্যরা কুয়াকাটার সৈকত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান নামে। এ সময় পর্যটকদের ফেলে রাখা প্লাস্টিক বর্জ্যসহ অপচনশীল ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করেন। এর আগে রবিবার সকালে কুয়াকাটা অবস্তিত শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারে রাখাইন শিক্ষার্থীদের সাথে জেন্ডার সেনসিটাইজেশন বিষয়ক আলোচন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ‘বৃহন্নলা’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মো. সাদিকুল ইসলাম, বৌদ্ধ বিহারের পরিচালক ইন্দ্র বংশ ভিক্ষু, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের পিইচডি গবেষক আসিবুর রহমান সহ বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য ও বৌদ্ধ বিহারের রাখাইন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা লৈঙ্গিক বৈচিত্র, একীভ‚ত সমাজ, একীভ‚ত শিক্ষা ও মানবাধিকারের নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে শেষ বিকেলে সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে ২ কিলোমিটার ঝাউবন পর্যন্ত এই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আর আগত পর্যটকরা তাদের এ ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। এ দৌড় প্রতিযোগিতায় তৃতীয় লিঙ্গের ৯ জন সহ বৃহন্নলা’র ২৫ জন সদস্য অংশ গ্রহন করে।
এতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তৃতীয় লিঙ্গের পিয়া, ২য় স্থান আভা মুসকান তিথি, ৩য় নদী। এছাড়া মেয়েদের মধ্যে প্রথম সানজিদা ইসলাম মিমি, ২য় সাদিয়া আফরোজ, ৩য় জান্নাতুল ফেরদৌস পূর্ণতা। ছেলেদের মধ্যে প্রথম মোহাইমিনুল ইসলাম, ২য় নেহাল আহমেদ, ৩ য় রুহুল আমিন। এসব বিজয়ীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরন করে ‘বৃহন্নলা’ সংগঠন।সংগঠনের নেতারা জানান, সমাজের সকল স্তরের সদা বঞ্চিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি ও সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে।
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন বৃহন্নলার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মো.সাদিকুল ইসলাম বলেন, সমাজে নারী পুরুষ কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের এই যে অবহেলিত মানুষ। এদের নিয়ে যে কি আলাদা বৈষম্য তৈরি হয়, শিশুকাল থেকে এই বৈষম্যটা, যাতে আর কোন মানুষের মধ্যে তৈরি না হয়, যে কারণে আমাদের এই আয়োজন। সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইতোমধ্যে হিজড়াদের আতœপরিচয় সংকট বিমোচনে তাদেরকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে এবং এরই সাথে গ্রহণ করেছে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।