ভূরুঙ্গামারীতে শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
শামসুজ্জোহা সুজন , উপজেলা প্রতিনিধি, (ভূরুঙ্গামারী) কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: বুধবার ১১ই অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৫০ অপরাহ্ন
ভূরুঙ্গামারীতে শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর দারুল উলুম আশরাফিয়া মাদ্রাসার পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক মুফতী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। 


মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত মতিউর রহমানের শাস্তির দাবিতে ওই মাদ্রাসা ঘেরাও করেছেন। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর পিতা বাদী হয়ে মতিউর রহমান ও তার এক সহযোগির নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।


নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীর নাম শামীম হোসেন (১৫)। সে উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ শিংঝাড় গ্রামের কাঠমিস্ত্রী আনোয়ার হোসেনের ছেলে ও দারুল উলুম আশরাফিয়া মাদ্রাসার উর্দু ফার্সি কিতাবখানা বিভাগের ছাত্র।


জানাগেছে, মঙ্গলবার বিকালে শামীম মোবাইলে ইসলামি বক্তাদের ওয়াজ দেখছিল। মোবাইল দেখার অপরাধে মাদ্রাসার পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক মুফতী মতিউর রহমান তার আরেক সহযোগী মুফতী সাইফুল্লাহর উপস্থিতিতে শামীমকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেধড়ক পিটুনি দেন।

পিটুনিতে শামীমের শরীরের বিভিন্ন স্থান মারাত্মকভাবে জখম হয়। এরপর তিনি একটা সাদা স্ট্যাম্পে শামীমের স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। এঘটনা কাউকে জানালে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করার ভয়ভীতি দেখান।


শামীম গোপনে তার এক খালার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে অভিভাবকদের খবর দিতে বলে। খবর পেয়ে শামীমের বাবা-মা এসে তাকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।


শামীমকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার সময় স্থানীয়রা নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পারেন। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মাদ্রাসা ঘেরাও করে মতিউর রহমানের শাস্তি দাবী করেন। মতিউর রহমান পিছনের গেট দিয়ে পালিয়ে যান। খবর পয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।


নির্যাতনের শিকার শামীম হোসেনের পিতা আনোয়ার হোসেন বাদী হয় মতিউর রহমান ও তার সহযোগি মুফতী সাইফুল্লাহর নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 


মুফতী মতিউর রহমান কয়েক বছর আগে ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের দেওয়ানের খামার গ্রামে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দারুল উলুম আশরাফিয়া মাদ্রাসা নামের একটি আবাসিক মাদ্রাসা চালু করেন।


তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের সামান্য কারনে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা, সাদা স্ট্যাম্প স্বাক্ষর নিয়ে রাখা এবং মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।


শামীম জানায়, প্রায় সময়ই প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের সামান্য কারনে মারপিট করেন এবং সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. এএসএম সায়েম জানান, শামীম হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। 


ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি রুহুল আমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে। 


উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস বলেন, শিক্ষকের নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।