স্বামীকে মেয়ের বাড়ি লিখে না দেয়ার পাশাপাশি দাবি করা টাকা না দেয়ার ঘটনার সূত্র ধরে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন এক নারী। স্বামী ও তার স্বজন-সহযোগীদের ভয়ে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। যাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে ওই নারীকে নানানভাবে হেনস্থা ও লাঞ্চনা করারও অভিযোগ উঠেছে।
আর এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভূক্তভোগী নারী বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম দাড়িয়ালের বর্তমান বাসিন্দা মোসাঃ সিমু হাওলাদার।
এসময় তার সাথে সন্তান নাহিদা আক্তার বিথী, নির্জর মাহমুদ ও মিজবাহসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সিমু হাওলাদার বলেন, আমি সিমু হাওলাদার, বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড, দাড়িয়াল গ্রামের বাসিন্দা। আমার উপর দীর্ঘদিন যাবত যৌতুকের দাবীতে নির্যাতন চালিয়ে আসছে আমার স্বামী বজলু হাওলাদার। বিগত ৬ মাস যাবত নির্মমভাবে (শারেরীক ও মানসিক ভাবে) আমি ও আমার মেয়ে এই নির্যাতন শিকার হচ্ছি। কয়েকবার বাকেরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য হেমায়েত মেম্বার সহ অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি ঘটনাটি সম্পর্কে যানে। এ ব্যাপারে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মহোদয় ও জেলা পুলিশ সুপার মহোদয় বরাবর আবেদন করেছি। আমি গত ৩০ জুলাই বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ন্যায় বিচার চেয়ে বজলু হাওলাদারকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করি। এর পর বজলু হাওলাদার ক্ষীপ্ত হয়ে আমার উপর বিভিন্ন প্রকার চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।
তিনি বলেন, আমার বর্তমান বসত বাড়িটি আমার বড় মেয়ের। সেই বাড়িটি তার নামে (বজলু হাওলাদার) লিখে দিতে বলে সাথে নগদ ১৫ লাখ টাকা দাবী করে। আমি (আমার স্বামীর) এমন দাবী মানতে অক্ষম হইলে আমাকে বাড়ি হতে বের হতে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে আমার স্বামী ও তার সহযোগী মোঃ রফিকুল ইসলাম, রাকিব গাজী, সোহেল সরদার, রেজাউল সহ ৮/১০ জনের একটি বাহিনী। আমি ও আমার মেয়েকে কোন টেম্পু, ভ্যান গাড়ি, হোন্ডা সহ কোন যানবাহনে বহন করতে নিষেধ করেছে এ বাহিনী। এমনকি আমার পরিধেয় কাপড় খুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম। তাছাড়া আমি ও আমার মেয়ে বের হলে অশ্লীল আচরন করে এ বাহিনী।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ হেমায়েত মেম্বার সহ কয়েকজন কে জানিয়েও এর কোন প্রতিকার পাইনি। পরবর্তীতে গত ০৫ সেপ্টেম্বর দাড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের মোঃ বজলু হাওলাদার, মোঃ রফিকুল ইসলাম, রাকিব গাজী, সোহেল সরদার ও রেজাউলকে বিবাদী করে অভিযোগ দায়ের করি। ৯ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান মহোদয় বিচার সালিশির জন্য উভয়পক্ষকে পরিষদে উপস্থিত থাকতে বলেন। আমি ও বিবাদীর ২/১জন ছাড়া বাকিরা ঐ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন। আমি পরিষদে অভিযোগ দেওয়ার কারনে আমার স্বামী (বজলু হাওলাদার) সহ অন্যান্যরা ৭ দিনের মধ্যে আমি বাড়ি ছাড়া না হলে আমাকে হত্যার হুমকি প্রদান করেছেন।
এব্যাপারে আমি মোবাইল ফোনে বাকেরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ ও সারসী পুলিশ ফাড়িতে সহায়তা চেয়েছি। তবে সেখান থেকে তেমন কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি।
এদিকে কোন গাড়ি আমাকে বহন না করায় এবং স্বামী ও তার সঙ্গীদের ভয়ে পায়ে হেটে ভিন্ন পথে বরিশাল এসে গত ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার মহোদয় বরাবর ঘটনার বিবরণ দিয়ে আবেদন করি।
তিনি বলেন, আমি খুলনা এলাকার মেয়ে। ১৫/১৬ বছর পূর্বে আমার ২ কন্যা সন্তান সহ আমাকে মোঃ বজলু হাওলাদার বিবাহ করেন। পরবর্তীতে আমার নিজ এলাকা খুলনায় আমরা বসবাস করি। মোঃ বজলু হাওলাদার ও আমার দাম্পত্য জীবনে ২টি পুত্র সন্তান রয়েছে। আমার পৈত্রিক অর্থায়নে আমার প্রথম কন্যা সন্তানটি বিদেশে যায়। পরবর্তীতে
কয়েক বছর পূর্বে মোঃ বজলু হাওলাদার আমাদেরকে নিয়ে তার নিজ এলাকায় বাকেরগঞ্জ দাড়িয়াল বসবাস শুরু করে। আমার মেয়ের উপার্জিত টাকা দিয়ে সে একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান দার করে। এরপরে একটি জমি কেনার প্রস্তাব দিলে আমার মেয়ে রাজি হয় এবং সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে নিজ নামে জমি ক্রয় করে। কিন্তু আমার স্বামী উক্ত জমির কিছু অংশে মেয়ের নামের পাশাপাশি নিজের নাম রাখে যা পরবর্তী সময় প্রকাশ পায়। আমার মেয়ের অর্থায়নে তার ক্রয়কৃত জমিতে একটি পাকা ভবন নির্মান করে সেখানে আমরা বসবাস করি। বর্তমানে আমার স্বামী ঐ বিল্ডিং সহ জমি তার নামে লিখে বিভিন্ন প্রকার চাপ প্রয়োগ করিতেছে। আমার ভরনপোষন দিচ্ছে না। আমি খুলনার মেয়ে হওয়ায় এ এলাকায় আমার কোন আপনজন না থাকায় সে (বজলু হাওলাদার) তার সাঙ্গপাঙ্গো নিয়া আমার ও আমার মেয়ের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দিচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে বজুল হালাদারের মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, আদালতে যৌতুক মামলা রয়েছে এটা ঠিক আছে। তবে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মোটরসাইকেল চালকদের সাথে সিমুর ব্যক্তিগত ঝামেলা হয়েছিলো, সেজন্য তারা তাকে আনা নেয়া করতে চায়নি, এখন তো সবকিছু স্বাভাবিক।
অপরদিকে এ বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মাকসুদুর রহমান। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন জানিয়ে বলেন, কোথাও আইনের ব্যতয় ঘটলে তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।