নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি: সংবাদ সম্মলনে মেয়র আরিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ১৭ই মে ২০২৩ ০৯:২৯ অপরাহ্ন
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি: সংবাদ সম্মলনে মেয়র আরিফ

সিসিক নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন নির্বাচনী উত্তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে নানা ঘটনা বিস্তার লাভ করছে। বিশেষ করে বিএনপি নেতা বর্তমান মেয়র আরিফুল হককে কেন্দ্র করে। নগরবাসী খুব সতর্কতার সঙ্গে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য  বিএনপির অব্যাহত চাপ সামলে শেষতক আরিফ কি করবেন সেটাই নগরবাসীর কৌতুহল। 


অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানসহ অপর ৭ মেয়র প্রার্থী মাঠ চষে ফিরছেন। মেয়র প্রার্থী মোট ৮ ও কাউন্সিলর পদে ৪৩৬ জন মনোনয়ন কিনেছিন বুধবার পর্যন্ত। কিন্তু তার পরও ‘নির্বাচনী মাঠ জমে উঠছে না’ আরিফুলের বিষয়টি খোলাসা না হওয়া পর্যন্ত। আগামী ২০ মে আরিফ প্রার্থীর বিষয়টি খোলাসা করবেন। 


এদিকে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসভবন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করার ঘটনায় সিলেটে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত ১০টার দিকে তাদের প্রত্যাহার করে নেয় জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়।

 

বুধবার বিকালে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দাবি করছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মেয়রের দাবি তাকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার নানা চেষ্টা চলছে। 


তিনি বলেন ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে আমাকে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে’। মেয়র বলেন, মৌখিক বা লিখিত কোনোভাবেই আমাকে বা সিসিকের কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। অথচ গত ৬ বছর ধরে মাসিক বেতনের বিনিময়ে আনসার বাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে নগরভবন ও আমার (মেয়রের) বাসার অফিসসহ সিসিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাখা হয়। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে  নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৬ জনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এতে আমার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। 


আরিফ বলেন, প্রথম মেয়াদে মেয়র থাকাকালীন আমাকে সরকার থেকে দু’জন গানম্যান দেওয়া হয়। কিন্তু পরের মেয়াদে তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকায় মাসিক চুক্তিতে আনসার বাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়। শিডিউল করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা দিয়ে আসছেন তারা। তাদের মধ্যে থেকে ৬ জনকে আমার বাসা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাখা হয়েছে। কিন্তু  হঠাৎ করে এই ৬ জনকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বাসা-সংলগ্ন অফিসে রাখা সিসিকের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল এখন অনিরাপদ। এটা অতি উৎসাহী হয়ে এই বাহিনীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।

  

তিনি বলেন, প্রশাসনের অতি উৎসাহী কতিপয় কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড খোদ সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে। আমার বাসার নিরাপত্তা-সদস্যদের কিন্তু সরকারের নির্দেশনায় প্রত্যাহার করা হয়নি।


আগামী সিসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র আরিফুল বলেন, সম্প্রতি আমি মহানগরের যেখানে যাচ্ছি এবং আমার সঙ্গে ছবি পর্যন্ত তুলছেন। দেখা যাচ্ছে রাতের বেলা তাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাউকে রিমান্ডে পর্যন্ত নিচ্ছে। আমি তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাকে প্রধানমন্ত্রী শপথ করিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা এমন একজন জনপ্রতিনিধিকে কীভাবে মূল্যায়ন করতে হয় সেটিও সম্ভবত ভুলে গেছেন। 


মেয়র আরিফ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমার বাসায় যদি এভাবে নিরাপত্তা দেওয়া আইনসিদ্ধ না হয় তবে দীর্ঘ ৬ বছর তারা কোথায় ছিলেন?  


সিসিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় থেকে ২৩ জন আনসার সদস্যকে নিয়োগ দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে পাঁচজন আনসার সদস্য দিন ও রাতে পালাক্রমে মেয়রের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পাশাপাশি মেয়রের বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করছিলেন এই আনসার সদস্যরা।


এ বিষয়ে আনসার ও ভিডিপির সিলেট জেলার কমান্ড্যান্ট আলী রেজা রাব্বি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, পাঁচ বছর আগে নগর কর্তৃপক্ষ নগর ভবনের নিরাপত্তা দিতে আনসার নিয়েছিল। বাসা বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আনসার নেওয়া যায় না। আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। যোগদানের পর বিষয়টি জানতে পেরে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। এখন এসব আনসার সদস্য শুধু নগর ভবনে দায়িত্ব পালন করবেন।  তবে কারও কোনো ব্যক্তিগত কাজ করবেন না। 


কাউন্সিলর পদে ৪৩৬ জন, মেয়র পদে ৮ জন:

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মোট ৪৩৬ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮, সাধারণ ওয়ার্ডে (পুরুষ) ৩৩৮ ও সংরক্ষিত (নারী) ওয়ার্ডে ৯০ জন কিনেছেন মনোনয়ন। গত ২৭ এপ্রিল থেকে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন প্রার্থীরা। সংগ্রহ করা যাবে ২৩ মে পর্যন্ত। 


এ পর্যন্ত মেয়র পদে মনোনয়ন কেনা ৮ জনের মধ্যে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী হলেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল) ও হাফিজ মাওলানা মাহমুদুুল হাসান (হাতপাখা)। আর স্বতন্ত্র হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন ও মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী কিনেছেন মনোনয়ন। কাউন্সিলর পদে ৪৩৬ জনের মধ্যে ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (মহিলা কাউন্সিলর) ৯০ জন এবং ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ডে (পুরুষ কাউন্সিলর) ৩৩৮ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।