আশাশুনিতে ইটভাটা তৈরিতে মানা হচ্ছে না সরকারী নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: রবিবার ১৩ই নভেম্বর ২০২২ ০৫:১৬ অপরাহ্ন
আশাশুনিতে ইটভাটা তৈরিতে মানা হচ্ছে না সরকারী নিয়ম

নদী দখলসহ সরকারি আইন লঙ্ঘন করে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ পন্থায় ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন আশাশুনির বেশকিছু ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অধিকাংশ ইটভাটা মালিক লোকালয়ে ঢুকে পার্শ্ববত্তী নদী ও ফসলি জমির উপরে অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ করে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।


উপজেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, আশাশুনি উপজেলায় বর্তমানে ৬ টি ইটভাটা রয়েছে। বেসরকারি হিসাব মতে ১০ থেকে ১৫ টি ইট ভাটা রয়েছে আশাশুনিতে। ভাটা শুরুতে অধিকাংশ পুরাতন ইটভাটাগুলি ফিট চিমনি পদ্ধদিতে গড়লেও বর্তমানে অনেক ভাটা জিগজ্যাগ কিলন পদ্ধতিতে স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি নীতিমালায় রয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ইটভাটাস্থাপন করতে হবে। যেমন- হাইরিডহফম্যান কিলন, জিগজ্যাগ কিলন, ভারটিক্যাল স্যাফটরিক কিলন, টানেল কিলন বা অনুরুপ কোন ভাটা। 


সম্প্রতি ২০১৩ এর আইন জোরদার হওয়ায় সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে আশাশুনি এলাকায় অনেক ইটভাটা জিগজ্যাগ কিলন রূপে তৈরি করেছে। তবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা সংক্রান্ত সিংহভাগ আইন কানুন মানছে না ভাটা কর্তৃপক্ষ।


সরেজমিনে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যমান আইন থাকলেও উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটা মালিকরা তা মানছে না। এরা প্রত্যেককে প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দেদারছে ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে। আশাশুনি বেতনা নদীর কয়েক শত একর চড় দখল করে অবৈধভাবে বেশকিছু ইটভাটা গড়ে উঠেছে। 


নদীর মাঝ বরাবর বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকিয়ে পলি ভরাট করে তা ব্যবহার করছে। ফলে একদিকে হারাতে বসেছে তীব্র খরস্রোতা বেতনা ও মরিচচাপ নদীর নাব্যতা এবং অন্যদিকে নদীর ¯্রােত বাধা প্রাপ্ত হয়ে দু’পাশে জেগে উঠছে চর। ভাটা এলাকায় বিভিন্ন লোকজনের সাথে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়,তারা বলেন ইটভাটা মালিকরা গায়ের জোরে এ বেতনা নদী দখল করে নিচ্ছে। 


আর স্থানীয় তহশীল দার ও উপজেলা ভূমিঅফিসের সার্ভেয়ার উর্দ্ধত্তন কতৃপক্ষকে ভূল বুঝিয়ে নদীতে জেগে উঠা চড় ডিসিআর দিয়ে যাচ্ছেন।আর যারা ডিসিআর প্রাপ্ত হচ্ছেন তারা খুব প্রভাবশালী নতুবা রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে।তারা বলেন আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ নদীটি মারা গেলে এলাকার মানুষ বাঁচবে না। ভাটা মালিকদের অপরিকল্পিতভাবে নদী দখল দেয়ার ফলে নদীর তীব্র স্রোত নদীতে আর নেই।


স্থানীয় সূত্র আরো জানান, অধিকাংশ ইটভাটা মালিক ৫০/১০০ বিঘার বেশি সরকারি খাস জমির উপর ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। এরমধ্যে অনেকেই ভূমিহীনদের নামীয় বন্দোবস্তকৃত জমি লিজ নিয়ে বৈধতা দেখাচ্ছেন। 


এদিকে বন্দোবস্তকৃত দলিলে যে শর্ত উল্লেখ করা আছে তা মানা হচ্ছেনা। 

দলিলে বলা আছে, এমনভাবে জমি ব্যবহার করিতে পারবেন না যাতে কোন প্রকারে জমির মূল্যহানি ঘটে অথবা চাষাবাদের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সেখানে করা হচ্ছে ২০ ফুট গর্ত অথবা পাহাড় সমান উচু করে ইট ভাটা তৈরি করা হয়েছে। 


গত বছর ইট পোড়ানো মৌসুমে মাঝে মধ্যে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভাটা পরিচালনার রাজস্ব আদায় করেন। কিন্ত তাতে ক্ষান্ত হচ্ছে না নদী খাদক ভাটা মালিকরা।এ ব্যাপারে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা চান এলাকা বাসি।