রাজবাড়ী: হাতুড়ি-বাটাল দিয়েই কাটা হয় লাশ !

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
রাজবাড়ী: হাতুড়ি-বাটাল দিয়েই কাটা হয় লাশ !

মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কাটা-ছেঁড়া করা হয় আদিকালের হাতুড়ি-বাটাল আর ছুরি-চাকু, প্লায়ার্স দিয়ে। ডিজিটাল এই যুগেও রাজবাড়ী জেলার একমাত্র মর্গের অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। সনাতনী এই কায়দায় একটি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে সময় লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এখনো এই মর্গে নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে মৃতদের ময়নাতদন্ত।  মরদেহ কাটার কাজে এখনো সম্বল রয়েছে  হাতুড়ি-বাটালই। অথচ আধুনিক মর্গগুলোতে ইলেকট্রিক ‘স’ (করাত) ব্যবহার করা হয়।


দীর্ঘদিন ধরে এখানে নেই কোনো ডোম। ফলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়েই কাটা হয় মরদেহ। এখানে নমুনা সংরক্ষণের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। এতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেতে স্বাভাবিকের চেয়ে সময় লাগছে বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন,  বিশেষজ্ঞ ও উপযুক্ত যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে অনেক আলোচিত হত্যাকাণ্ডের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নিয়ে জনমনে সন্দেহ, উদ্বেগ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেক নির্মম হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্তে পাওয়া ভুল প্রতিবেদনের কারণে তা আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নিতে হয় পুলিশ, আদালত ও স্বজনদের। তারা আরো বলেন, রাজবাড়ীতে মরদেহের নমুনা সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত হওয়া দরকার।


জানাগেছে, রাজবাড়ী জেলার একমাত্র মর্গটি রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে শহরের ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি এলাকায় অবস্থিত। এ মর্গে নেই  আধুনিকতার ছিটেফোঁটাও। মর্গটিতে নেই ভেন্টিলেশন ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।  চিকিৎসকদের বসার জন্য নেই কোন আলাদা কক্ষ। পানির পাম্প চুরির পর আর তা কেনা হয়নি। এ কারণে সেখানে নেই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। মান্ধাতা আমলের হাতুড়ি-বাটাল ছুরি-চাকু দিয়েই চলছে ময়নাতদন্তের কাজ। ডোমের পদটিও দীর্ঘদিন শূন্য। ফলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়ে মরদেহ কাটানো হয়। তবে মর্গে লাশ সংরক্ষণের জন্য একটি মরচুয়ারি কুলার (মৃতদেহ সংরক্ষণের ফ্রিজ) আছে, কিন্তু নেই কোনো নৈশ প্রহরী। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের দোতলার ছোট্ট একটি কক্ষে ভিসেরা (নমুনা) রাখা হয়। নমুনা পরীক্ষাগারে দ্রুত পাঠানোর কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে হচ্ছে না।


রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট উজির আলী শেখ বলেন, ‘আমাদের রাজবাড়ীতে মর্গে যে ভিসেরা আলামত রাখা হয়, সেগুলোর অবস্থা আরো উন্নত করা দরকার। আলামত তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষাগারে পাঠানো দরকার। মর্গ আধুনিক না হলে, কম-বেশি ভুল থেকেই যাবে। মর্গে কাটা ছেঁড়ার আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডোম থাকতে হবে। একইসঙ্গে কাজের প্রতি মনোযোগ থাকা দরকার সংশ্লিষ্টদের।


রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্তে পোস্টমর্টেম গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাজবাড়ীতে তা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে বিঘ্নিত হয় তদন্ত। তাছাড়া রাজবাড়ী মর্গে ডোমের পদ শূন্য। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও এটাই বাস্তবতা। একজন ক্লিনারকে দিয়ে ওই সব কাজ করানো হচ্ছে।


রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটোন বলেন, রাজবাড়ীর যে মর্গ রয়েছে, তা হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ২৫০ শয্যার নির্মাণাধীন কাজ শেষ হলে সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত মর্গ করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।