বরিশালগামী চলন্ত লঞ্চে সন্তানের জন্ম, আজীবন যাতায়াত ফ্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৯শে আগস্ট ২০২২ ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
বরিশালগামী চলন্ত লঞ্চে সন্তানের জন্ম, আজীবন যাতায়াত ফ্রী

ঢাকা থেকে বরিশালগামী চলন্ত লঞ্চে ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ঝুমুর নামে এক নারী। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এমভি প্রিন্স আওলাদ লঞ্চে অভিজ্ঞ ধাত্রী রানী বেগমের সহায়তায় নবজাতকের জন্ম হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লঞ্চের সুপারভাইজার হৃদয় খান। এদিকে লঞ্চে জন্ম নেয়া নবজাতক ও তার মাকে নগদ ১০ হাজার টাকা উপহার দেয়ার পাশাপাশি প্রিন্স আওলাদা লঞ্চে নবজাতক ও তার মা-বাবার যাতায়াত আজীবন ফ্রি করার নিশ্চয়তা দিয়েছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।


ঝুমুরের স্বামী মোঃ হারিস জানান, চিকিৎসকের দেওয়া সময় অনুসারে আরও দিন আঠারো পরে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা। নিজ জন্মভূমিতে সন্তানেরও জন্ম হবে সে আশায় ঢাকা থেকে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চে বরিশালে আসছিলেন তারা। মাঝ নদীতে হঠাৎ প্রসব ব্যথা ওঠে ঝুমুরের। লঞ্চে মেডিকেল কিট থাকলেও কারও সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা তো নেই। তা ছাড়া লঞ্চ থামিয়ে যে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, তাও সম্ভব না। তাই কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না হারিস। যে লঞ্চে যাচ্ছিলেন, তাতে কোনো চিকিৎসক-নার্স বা ধাত্রী আছেন, তাও জানেন না। এ অবস্থায় লঞ্চ স্টাফদের বুঝিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন হারিস। এক পর্যায়ে লঞ্চেই পেয়ে যান অভিজ্ঞ ধাত্রী রানী বেগমকে।


হারিস বলেন, লঞ্চের স্টাফরা এসে ঝুমুরকে একটি কেবিনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ডেকের একটা অংশ খালি করে সেখানে তার প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়। ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রানী বেগমের মাধ্যমেই মাঝ নদীতে লঞ্চের ডেকে ছেলে সন্তান প্রসব করেন ঝুমুর। এ সময় লঞ্চের স্টাফরা তাকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে সহায়তা করেন।


প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা জানান, রানীর পাশাপাশি এমভি আওলাদ-১০ লঞ্চের স্টাফ ও অন্যান্য যাত্রীরাও অনেক সহায়তা করেছেন। তাদের বিষয়টি জানানোর পর যে যার নিজ নিজ জায়গা ছেড়ে দিয়ে প্রসবের স্থান করে দেন। নারী-পুরুষ সবাই মিলে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন।


ধাত্রী রানী বলেন, তিনি সন্তান প্রসবের কাজে ১৫ বছরের অভিজ্ঞ। বহু নারীর সন্তান প্রসবে সহায়তা করেছেন তিনি। কিন্তু মাঝ নদীতে গভীর রাতে কোনো নারীর সন্তান প্রসবে সহায়তার ঘটনা তার জীবনে প্রথম। সাহস নিয়ে তিনি ধাত্রীর কাজটি করেছেন। মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন চিন্তা করে তার আনন্দ হচ্ছে।


মো. হারিস তার নবাগত সন্তান নিয়ে ব্যাপক খুশি। স্ত্রী ও সন্তান সুস্থ থাকায় সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানিয়েছেন তিনি। রানী বেগমকেও জানিয়েছে অসংখ্য ধন্যবাদ। লঞ্চ স্টাফদের কাছেও চির কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে জানান। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) নিজ বাসায় পৌঁছে এসব কথা জানান তিনি। হারিসের বড় ছেলে সাইমনও তার ফুটফুটে ছোট ভাইকে পেয়ে আনন্দিত। 


প্রসঙ্গত: এর আগে ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে সন্তান প্রসব করেছিলেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল এলাকার বাসিন্দা ফোরকান হাওলাদারের স্ত্রী ফাহিমা বেগম। ওই দিন রাত ১২টার দিকে মধ্য মেঘনা নদী অতিক্রমকালে লঞ্চের কেবিনে কন্যা সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। লঞ্চ কোম্পানীর চেয়ারম্যান মিসেস শামীমা নিজাম ওই শিশুটির নাম রেখেছিলেন নুসাইবাহ। একই সাথে অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চ কোম্পানী যতদিন থাকবে ততদিন ওই নবজাতকসহ তার বাবা-মায়ের এই লঞ্চ কোম্পানীর লঞ্চে যাতায়াত ফ্রি করার কথা জানিয়েছিলেন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজাম উদ্দিন মৃধা।