প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২৩:২০
ইলিশের পোনা (জাটকা) সংরক্ষণে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ ছয়টি নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সরকার মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
সরকারি এমন নিষেধাজ্ঞার কারণে এই সময় জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, অভয়াশ্রম এলাকায় জাটকা ধরা ক্রয়বিক্রয় এবং বিপণন নিষিদ্ধ থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু চাঁদপুরেই বেকার হচ্ছে ৫০ হাজারের বেশি জেলে। তবে সরকারি তালিকায় চাঁদপুরে ৪৪ হাজার ৩৫ জন জেলে রয়েছে। সরকারের তালিকাভুক্ত জেলেদের এই সময় ৪০ কেজি করে চার মাস খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচর, চর ভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনা নদীতে অভয়াশ্রম চলাকালে কোনো জেলেকেই নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। তবে জেলেদের অভিযোগ ৪০ কেজি চাল তারা সঠিক ভাবে পাচ্ছে না। সরকারিভাবে তাদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। তা পর্যাপ্ত নয়। খাবার তৈরি করতে চালের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণও প্রয়োজন হয়। আর্থিক দৈন্যতার কারণে তা সংকুলান করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া জাল নৌকা তৈরি করতে বিভিন্ন সমিতি আর এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের দুশ্চিন্তা তো রয়েছেই। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন জেলে।
চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার হরিসভা এলাকার কয়েকজন জেলে জানান, ৫০০ টাকা দিলে জেলে কার্ড মিলে। প্রকৃত অনেক জেলে কার্ড পাননি। অথচ পাশের পান দোকানি এবং এক রিকশাচালক সেই কার্ড দিয়ে মৌসুমের এই সময় চাল তুলে নিচ্ছেন। পাশের জাফরাবাদের আরও কয়েকজন জেলেও সেই একই অভিযোগ তুলে ধরেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কতিপয় জেলে নেতা তালিকা তৈরিতে সহায়তা করতে গিয়ে প্রকৃত অনেক জেলের নাম বাদ রেখেছেন। যেখানে নদী নেই এমনকি ইলিশও শিকার করে না, এমন লোকজনদের জেলে কার্ড দিয়ে এই সময় চালের ভাগ বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের মধ্যে মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এবং চাঁদপুর সদরে রয়েছে এমন আনেক জেলে। ফলে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন জেলেরা সরকারি প্রণোদনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত জেলেদের মধ্যে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া, ব্যাংক, এনজিও, সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, নিষেজ্ঞা চলাকালে কোনো জেলেকে নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। তবে নিষেজ্ঞা চলাকালে মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস ছাড়াও আরও দুই মাস অর্থাৎ ৪ মাস তালিকাভুক্ত ৪৪ হাজার ৩৫ জেলেকে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। এ সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ জাটকা কিংবা অন্য মাছ শিকারে নদীতে নামলে তার বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ইলিশের পোনা জাটকা সংরক্ষণে চাঁদপুর জেলা টাস্কফোর্স এবারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এসময় নদীতে দিনরাত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্যবিভাগের কর্মকর্তা, নৌ ও জেলা পুলিশ এবং কোস্টগার্ডের সদস্যারা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবেন।