প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:৩৭
ব্যাভিচারের চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হলো ধর্ষণ। ইসলামে ব্যভিচারের মতো ধর্ষণও কবিরা গোনাহের শামিল। সে কারণে যে কোনো ব্যক্তির ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা আবশ্যক। ধর্ষণ থেকে বাঁচতে যদি ধর্ষণকারীকে হত্যা করার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়, তাতেও সমর্থন দিয়েছে ইসলাম। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণাতেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে ব্যক্তি নিহত হয়েছে, সে শহিদ। জীবন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সে শহিদ। দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহীদ। আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে, সেও শহিদ।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, যদি কোনো ব্যক্তি নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে আর সে প্রতিরোধে হত্যার মতো কোনো ঘটনা ঘটে তাতেও কোনো দোষ নেই। কেননা সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে যদি প্রতিরোধকারী নিহত হয় তবে সে পাবে শাহাদাতের মর্যাদা। এ প্রতিরোধে সম্ভ্রম লুণ্ঠনকারীও নিহত হতে পারে।
সমাজে ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তিকে বাঁকা চোখে দেখে। তার প্রতি অবহেলা ও নানান কটুক্তি করে থাকে মানুষ। যা কোনোভাবে কাম্য নয়। কেননা ধর্ষনের শিকার হওয়া ব্যক্তি বল প্রয়াগকারী বা ক্ষমতাধর ব্যক্তির অত্যাচারের শিকার। ইসলামের আলোকে এ ব্যক্তি মাজলুম। তাই যে ব্যক্তি ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তাকে ধর্ষণ হওয়ার কারণে যেমন অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা যাবে না তেমনি তাকে বাঁকা চোখে দেখা কিংবা কটুক্তিও করা যাবে না।
পক্ষান্তরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগে যদি কোনো ব্যক্তির প্রতি ঘৃণ্য এ অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয় তবে এ কারণে ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তির কোনো পাপও হবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
ইসলাম শুধু ব্যভিচারের শাস্তিই ঘোষণা করেনি বরং ব্যভিচারের সমগোত্রীয় ধর্ষণেরও মারাত্মক ভয়াবহ শাস্তির বিধানও রেখেছে। কেননা ব্যভিচার উভয় পক্ষের সম্মতিতে সংঘটিত হয় আর ধর্ষণ এক পক্ষের ইচ্ছায় অন্যের উপর ক্ষমতা বা বল প্রয়োগে হয়। তাই ধর্ষণের শিকার হওয়া ব্যক্তি মাজলুম বা অত্যাচারিত। আর ইসলামে মাজলুমের কোনো শাস্তি নেই। এক্ষেত্রে শাস্তি হবে শুধু ধর্ষণকারীর। ইসলামে এ সব ক্ষেত্রে শাস্তি প্রয়োগের সুস্পষ্ট বিধান রেখেছে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় সংঘঠিত হয়। আর তাহলো-
যিনা বা ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে দুই ধরনের হয়ে থাকে। ব্যভিচারী যদি অবিবাহিত হয় তবে এক ধরণের শাস্তি। আর যদি বিবাহিত হয় তবে ভিন্ন শাস্তি।
অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি
বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি
ধর্ষকের শাস্তি
>> ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ ও আহমদ ইবনে হাম্বাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম-এর মত হলো- ‘ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।’ অর্থাৎ ধর্ষক অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত আর বিবাহিত হলে পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করা।
মুহারাবা কি?
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে-
এটি হল তাদের জন্য দুনিয়ার লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩৩)
এ আয়াতের আলোকে বিচারক ধর্ষণকারীকে ব্যভিচারের শাস্তির সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখিত ৪ ধরনের যে কোনো শাস্তি প্রয়োগ করতে পারবে। কেননা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ধর্ষণ হলো আল্লাহ ও তার রাসুলের নিয়ম-নীতি বিরুদ্ধ অপরাধ। আর তা তাদের সঙ্গে যুদ্ধে উপনীত হওয়ার শামিল। তাছাড়া ধর্ষণের ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করা হয়। ইসলামের বিধান লঙ্ঘনে বল প্রয়োগ করলেও এ শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
তাই সমাজে যখন ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করে তখন সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে উৎপাটন করতে (মুহারাবার) মতো ভয়াবহ শাস্তি প্রয়োগ করাও জরুরি। আর যদি ধর্ষণ কারণে হত্যাজনিত অপরাধ সংঘটিত হয় কিংবা ধর্ষণের শিকার কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তবে ঘাতকের একমাত্র শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।
ইসলামের প্রথম যুগের জোরপূর্বক ব্যভিচার তথা ধর্ষণের কিছু বিচারের বর্ণনা-
(কুরআন-হাদিসে বহু অপরাধের ওপর শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতি কুরআন-হাদিসে সুনির্ধারিত তাকে হদ বলে।)
>> হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে সরকারি মালিকানাধীন (কাজে নিযুক্ত) এক গোলাম এক দাসির সঙ্গে জবরদস্তি করে ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে ওই দাসির কুমারিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ওই গোলামকে কষাঘাত (বেত্রাঘাত) করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসিকে কোনো শাস্তি প্রদান করেননি।’ (বুখারি)
মূল কথা হলো
তাই অপরাধমুক্ত মানব সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতিটি মানুষে মনে আল্লাহর ভয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে সে দুনিয়ার যাবতীয় অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে। আর ঈমানের অপরিহার্য দাবিও হচ্ছে মানুষ অপরাধমুক্ত জীবন প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অপরাধ ছেড়ে দেবে। দুনিয়া ও পরকালের জবাবদিহিতার মানসিকতা নিজেদের মধ্যে তৈরি করবে।
আল্লাহ তাআলা পুরো মানবজাতীকে ইসলামের গর্হিত কাজগুলো ছেড়ে দেয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধানগুলো যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ভিত্তিক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর