মহানবী (সা.) এর সাত অভ্যাস ছিল যা আমাদের জন্য খুবি গুরুত্ব পূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে নভেম্বর ২০১৯ ১০:০৩ পূর্বাহ্ন
মহানবী (সা.) এর সাত অভ্যাস ছিল যা আমাদের জন্য খুবি গুরুত্ব পূর্ণ

মহানবী (সা.) আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুপম আদর্শ। কেবল নবুওয়াত এবং সমষ্টিগত জীবনই নয়, বরং তার ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি আমাদের জন্য অনুসরণীয় শিক্ষা রেখে গেছেন। তার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন অভ্যাস পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিকভাবেও মানুষের জন্য উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।প্রিয় নবীজির (সা.) ব্যক্তিগত জীবনের সাতটি অভ্যাস নিম্নে আলোচনা করা হল-

১. সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা: রাসূল (সা.) এর অভ্যাস ছিল এশার নামাযের পরপরই ঘুমাতে যাওয়া এবং ফজরের নামাযের একটু আগেই তিনি ঘুম থেকে উঠে যেতেন। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞান বলে, মানুষের সুস্থতা, সৃষ্টিশীলতা ও কর্মদক্ষতার সাথে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার সম্পর্ক রয়েছে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা বর্তমান পরিবেশে আমাদের জন্য যদিও কষ্টকর, তথাপি যদি আমরা চেষ্টা করতে থাকি এবং প্রতিদিন একটু একটু আগে ঘুম থেকে উঠি, আমাদের জন্য কাজটি সহজ হয়ে আসবে।

২. কম খাওয়া: কম খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ ও অসুস্থতার পরিমাণ কমে আসে। রাসূল (সা.) এর এই অভ্যাসটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত হয়েছে।

ইসলামী আচার অনুযায়ী, পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি এবং এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা উচিত।

৩. ধীরে ধীরে খাওয়া: আমরা বর্তমানে জানি, খাদ্য গ্রহণের পর পেট পূর্ণ হয়ে গেলে আমাদের মস্তিষ্কে শরীরের সংকেত দেওয়ার জন্য বিশ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়। যদি আপনি দ্রুত খাবার গ্রহণ করতে থাকেন, তবে আপনি হয়তো সংকেত না পাওয়ার কারণে অধিক খাবার গ্রহণ করতে পারেন এবং তা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ধীরে ধীরে খেলে আপনি প্রয়োজনের তুলনায় অধিক খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারেন এবং এর মাধ্যমে আপনার শরীর খাদ্য হজমের জন্য সময় নিতে পারে। রাসূল (সা.) এটি নিজেও পালন করেছেন এবং অন্যকেও এটি পালন করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন।

৪. উপভোগ করে খাওয়া: “একত্রে খাও এবং একাকী নয়, একত্র হওয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে।” (ইবনে মাযাহ) রাসূল (সা.) এই অভ্যাসটির প্রতি জোর দিয়েছেন। বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে, একত্রে খাওয়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ ও দুঃশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া যায় এবং পরিবার ও শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সৃষ্টি করে।

৫. পানি পান: “এক নিঃশ্বাসে পানি পান করো না, বরং দুই বা তিন নিঃশ্বাসে পান করো।” পানি পান করার এটিই ছিল রাসূল (সা.) এর অভ্যাস।

বিজ্ঞান আজ প্রমাণ করেছে, কেউ যদি অল্প সময়ে খুব বেশী পরিমাণে পানি পান করে ফেলে, তবে তার মাথাব্যাথা হতে পারে, রক্তের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং কখনো কখনো মাথা ঘুরাতে পারে।

ধীরে ধীরে পানি পান আপনাকে সঠিকভাবে তা গ্রহন করতে এবং এর থেকে উপকার পেতে আপনাকে সাহায্য করে।

৬. রোযা রাখা: বর্তমানের গবেষণা আমাদের দেখাচ্ছে, শুধু খাদ্য গ্রহণই নয় বরং আমাদের খাদ্য গ্রহণের সময় এবং পদ্ধতিও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বৃহত্তর প্রভাব বিস্তার করে।

প্রিয় নবী (সা.) এর একটি নিয়মিত অভ্যাস ছিল রোযা রাখা। তিনি শুধু রমযানেই নয়, বরং প্রতি সপ্তাহের সোমবার এবং বৃহস্পতিবার তিনি রোযা রাখতেন। এছাড়া প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখেও তিনি রোযা রাখতেন।এর মাধ্যমে আপনার শরীরের বিভিন্ন হরমোনের নির্গমনে ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং শারীরিক সকল প্রকার জ্বালা-যন্ত্রণার উপশম হবে।

৭. কর্মঠ থাকা: ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে তিনটির বাস্তবায়ন একজন মুসলিমকে সুন্দর স্বাস্থ্য ও শারীরিক কাঠামো অর্জনে সাহায্য করে। নামায এর মধ্যে একটি নিয়মিত পালনের বিষয়, যা আপনার শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ ও পেশীর জন্য ব্যায়াম হিসেবে কাজ করবে। রোযা ও হজ্জ্ব একইভাবে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট, যা আপনার সুস্থতার জন্য সহায়ক হবে।রাসূল (সা.) শারীরিক পরিশ্রম এবং শরীরচর্চার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মুসলিম পিতা-মাতাদেরকে রাসূল (সা.) তাদের শিশুদের শরীরচর্চার জন্য সাতার, ঘোড়সওয়ারী এবং তীরন্দাজীর শিক্ষা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।আমরা যেনো আমাদের বাস্তবজীবনে এই অভ্যাসগুলো বাস্তবায়ন করি সুন্নাহর অনুসরণ ও একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্যই, পাশাপাশি এ সকল উপকারিতাগুলোও পারথিক জীবনে আমরা লাভ করবো ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।

প্রিন্সিপালঃ শাহজালাল রহ, ৩৬০ আউলিয়া লতিফিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা উপশহর সিলেট।