ইসলামি জীবন ব্যবস্থার সঠিক দিক-নির্দেশনা পেতে যেমন আদব-শিষ্টাচারের বিকল্প নেই। আর তা শেখাতে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন তার মনোনীত নবি ও রাসুল। যারা মানুষকে প্রভুর পরিচয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। ইসলামের শেষ নবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আল্লাহ তাআলা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সত্য ধর্মগ্রন্থ কুরআনসহ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশেষ নবি ও রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন।
অবস্থা ও অবস্থানের আলাকে বিভিন্নভাবে মানুষকে সঠিক পথ ও মত শেখার ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত আলাকবর্তিকা হয়ে থাকবে। ইসলামের অনুসারি মুসলমানদের জন্য অবিস্মরণীয় এক ঘটনার মাধ্যমে ঈমানে, ইসলাম, ইহসান ও কেয়ামতের আলামতের পরিচয় তুলে ধরার ব্যবস্থা করেছিলেন আল্লাহ তাআলা। সে ঘটনার বর্ণনা হাদিসে জিবরিল নামে পরিচিত।
ঈমান, ইসলাম, ইহসান ও কেয়ামত সম্পর্কিত হাদিসে জিবরি-এর ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-
তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিত, কুচকুচে কালো চুল ওয়ালা এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত। যার মাঝে দীর্ঘ সফরের কোনো চিহ্ন যেমন নেই তেমনি সে ব্যক্তি আমাদের কারো পরিচিতও নয়। অর্থাৎ ধারে কাছের কেউ নয় যে, আমাদের কেউ তাকে চিনতে পারে।
ওই ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরাবর সামনে গিয়ে এমনভাবে বসে পড়ল যে, ওই ব্যক্তি নিজের হাঁটু প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাঁটুর সঙ্গে মিশিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন-
‘হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইসলাম হচ্ছে- ‘তুমি সাক্ষ্য দাও যে,
>> আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল।
>> নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।
>> জাকাত আদায় করা।
>> রমজানে রোজা পালন করা এবং
>> যদি সামর্থ থাকে তবে (বাইতুল্লায়) হজ করা।’
এরপর লোকটি বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন’। ওই ব্যক্তির সত্যয়নের বিষয়টি আমাদেরকে আশ্চার্যান্বিত করল। সে নিজেই জিজ্ঞাসা করে আবার নিজেই উত্তরের সত্যয়ন করলো। এরপর সে আবার বলল, ‘তাহলে আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তা হচ্ছে এই যে,
>> আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।
>> তাঁর ফেরেশতাগনের ওপর ঈমান আনা।
>> তাঁর কিতাবসমূহে বিশ্বাস করা।
>> তাঁর রাসুলগণের ওপর ঈমান।
>> আখেরাতর ওপর ঈমান আনা এবং
>> তাকদিরের ভাল-মন্দের ওপর ঈমান আনা।’
এবারও ওই ব্যক্তি বলল, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন।
এরপর ওই ব্যক্তি বলল, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তা হচ্ছে এই যে-
‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে না-ও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’
এরপর ওই ব্যক্তি বলল, আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি কিছু জানে না।’
তখন ওই ব্যক্তি বলল, তাহলে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে বলুন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তা হচ্ছে এই যে-
>> ‘দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে।
>> সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরিতে প্রতিযোগিতা করবে।
এরপর ওই ব্যক্তি (মজলিশ থেকে) চলে যায়। আর আমি (ওমর) আরও কিছুক্ষণ বসে থাকি।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, ‘হে ওমর! প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান?
আমি বললাম, ‘আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল অধিক ভাল জানেন।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তিনি হলেন জিবরিল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন।’ (মুসলিম, মিশকাত)
হাদিসে জিবরিল মুমিন মুসলমানের জন্য অনেক অর্থবহ ও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ঈমান, ইসলাম ও ইহসানের পরিচয় ওঠে এসেছে এ হাদিসে। আবার দ্বীন শেখার আদব-শিষ্টাচারও ফুটে ওঠেছে এখানে। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য দিক-নির্দেশিকা ও আলোকবর্তিকা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব পথহারা মানুষকে ইসলামের সুশিক্ষায় নিজেদের একনিষ্ঠ ঈমানের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সঠিক ইবাদত বন্দেগিতে ইহসানের গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। কেয়ামতের আলামত থেকে নিজেদের আখেরাতমুখী করার শিক্ষা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।