
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৫

কী সে কথা? যে কথায় ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ জন্মেছিল ওসমান ইবনে তালহার হৃদয়ে। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে কথা, গুণ ও আদর্শে ওসমানের হৃদয়ে আশ্চর্যজনক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত যে গুণের প্রতিক্রিয়ায় ইসলাম গ্রহণ করলেন ওসমান ইবনে তালহা।
কী সে ঘটনা? কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল। আসুন জেনে নেয়া যাক প্রিয় নবির জীবনী থেকে ওসমানের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি- কাবা শরিফ মহান আল্লাহর ঘর। যুগে যুগে এ ঘরের জিম্মাদারি পালন করেছেন রাজা বাদশাহসহ অনেক বংশ-গোত্রের লোকেরা। সে সময়ও কাবা ঘরের যে কোনো দায়িত্ব পালনকে সম্মান ও মর্যাদার কাজ মনে করা হতো।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভের সময়কালে হাজিদের জমজমের পানি পান করানোর দায়িত্ব পালন করতেন হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। কাবা ঘরের অনেক কাজের দায়িত্ব ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিভাবক ও চাচা আবু তালিবের ওপর। সে সময় কাবা শরিফের চাবির দায়িত্ব পালন করতেন ওসমান ইবনে তালহা। তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। সে সময় সপ্তাহে ২ দিন (প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার) কাবা শরিফের দরজা খুলে দেয়া হতো। আর এ দুই দিন লোকেরা কাবা ঘরে প্রবেশ করার সৌভাগ্য লাভ করতো।
হিজরতের আগের কথা। ওসমানের ইসলাম গ্রহণের আগে একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবা নিয়ে কাবা শরিফে প্রবেশ করতে চাইলেন। ওসমান বিশ্বনবি ও তার সাহাবাদের কাবা ঘরে প্রবেশ করতে দিলেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা ঘরে প্রবেশে চাবি না পাওয়াকে অপমান মনে করে ওসমানের ওপর রাগ করেননি। আবার নিজ বংশ আভিজাত্যের প্রভাব খাটিয়ে জোর করে কাবা ঘরে প্রবেশও করেননি। এমনকি প্রবেশের চেষ্টাও করেননি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে ওসমানের সে বাধা মেনে ফিরে গেলেন। যাওয়ার সময় বললেন- ‘ওসমান! একদিন তুমি কাবা শরিফের এ চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে। আমি তখন যাকে ইচ্ছা তাকে এ চাবিটা দেব।’ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ কথার জবাবে ওসমান বললেন- ‘এমন দিন যদি আসে তাহলে সেটা হবে কুরাইশ বংশের অপমান ও অপদস্থ হওয়ার দিন।’
ওসমানের কথার জবাবে ধীরস্থির ও দরজা কণ্ঠে তার হৃদয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া সে কথাটি বিশ্বনবি এভাবে বললেন- ‘হে ওসমান! ‘না, না’, বরং যে দিন আমার হাতে কাবা চাবি আসবে সেদিন কুরাইশ বংশ হবে যথার্থ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তারা সেদিনই পাবে মুক্তির প্রকৃত স্বাদ।’

অবশেষে কাবা ঘরে না ঢুকেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতৃপ্ত হৃদয়ে মদিনায় হিজরত করলেন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাবা ঘরের প্রবেশের সে সুবর্ণ সময় ঘনিয়ে এলো। তখনও কাবার চাবির দায়িত্বে ছিল ওসমান ইবনে তালহা। বিশ্বনবির কাবা ঘরে প্রবেশ মক্কা বিজয়ের দিন বিশ্বনবি কাবা চত্ত্বরে আসলেন। ওসমান ইবনে তালহার কাছে চাবি চাইলেন। তখনও ওসমান ইসলাম গ্রহণ করেনি।
কাবা চাবি না পাওয়ার সামান্যতম ব্যথা-বেদনাও ছিল না তার হৃদয়ে। একান্ত অনাবিল প্রশান্ত হৃদয়েই তিনি সেদিন ডেকে ছিলেন- হে ওসমান! আজ থেকে আজীবন এ চারি দায়িত্বও তোমার। মানবজাতির জন্য কতই না তুলনাহীন উত্তম চরিত্র ও গুণের শিক্ষা রেখে গেলেন । যুগের পর যুগ যে শিক্ষায় আলোকিত হবে মুমিন হৃদয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উত্তম চরিত্রগুলো দান করুন। বিশ্বনবির আদর্শ পালন ও বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন।