
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৭

রবিউল আউয়াল। হিজরি (আরবি) বছরের তৃতীয় মাস। এ মাসটি যেসব কারণে বিখ্যাত তা হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেলাদাত (জন্ম), নবুয়ত, হিজরত এবং ওফাত। এ সবই সংঘটিত হয়েছিল রবিউল আউয়াল মাসে। বছরজুড়ে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণ ভুলে গিয়ে শুধু রবিউল আউয়ালে তার জন্ম উৎসবে মেতে থাকলেই পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যাবে না। বরং হাদিসে এসেছে-
‘সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওই ব্যক্তি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার পিতা-মাতা, সন্তান থেকে বেশি ভালোবাসবে। অর্থাৎ পিতামাতা-সন্তান থেকেও প্রিয় নবিকে বেশি ভালোবাসতে হবে।’ এ ভালোবাসার মানে এ নয় কিংবা মুখে মুখে এ কথা বলা নয় যে, ‘হে রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি আপনাকে ভালোবাসি।’ বরং এর মর্মার্থ হলো এটি যে- ‘রাসুল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছে তা ধারণ কর। আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক।’
কেননা যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে কিংবা তাকে অনুসরণ করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল। সে কারণেই দুনিয়ার প্রতিটি কথা ও কাজে শুধু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই আদর্শ মানতে হবে। তাঁর দেখানো পথেই নিজেদের পরিচালিত করতে হবে। মুমিন মুসলমানের অন্যতম আমলও এটি যে, তাঁর দেখানো পথ ও মতে থেকে জীবন পরিচালনা করবে। তবেই পাবে মহান আল্লাহর ভালোবাসা। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে রাসুল! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে তোমরা আমার অনুসরণ কর। তা হলেই আল্লাহ তাআলা তোমাদের ভালোবাসবেন। আল্লাহ তাআলা তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। আর এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত।’
আল্লাহ তাআলা নিজেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করেন ফেরেশতারাও রহমতের দোয়া করেন এবং মানুষকে তার প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির ওপর রহমত নাজিল করেন এবং ফেরেশতারাও তাঁর জন্য রহমত কামনা করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’সুতরাং মুমিন মুসলমানের ঈমানের দাবি হলো, তারা সারা বছর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠাবে। বিশেষ করে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত বেলাদাত, নবুয়ত, হিজরত ও ওফাতের মাসে তার প্রতি বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠাবে।
কেননা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালামে রয়েছে অনেক ফজিলত ও সাওয়াব। মুমিন মুসলমানের জন্য যার কিছু তুলে ধরা হলো-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত বর্ষণ করবেন। তার ১০টি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তার জন্য রহমতের ১০ দরজা খুলে দেয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ)
> ফেরেশতাদের মাগফেরাত কামনার ঘোষণা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠকারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা নিযুক্ত রয়েছে ফেরেশতা। যারা দরুদ পাঠকারী বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। হাদিসে এসেছে- হজরত আমের ইবনে রবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (খুতবা দেয়ার সময়) বলতে শুনেছি, ‘আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়তে থাকবে, ফেরেশতারা তার জন্য ততক্ষণ দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা যে, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম পড়বে।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)
