ইসলামে ইবাদতের পরিধি সীমাহীন বিস্তৃত। মুমিনের প্রতিটি কর্ম আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। তবে শর্ত হলো, আল্লাহর হুকুম মোতাবেক ও রাসুল (সা.) এর সুন্নত-পদ্ধতিতে হতে হবে। সব ধরনের নেক আমল বা ইবাদত কী কী—সংক্ষিপ্ত পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। কোন কোন ধরনের ইবাদত রয়েছে এবং কীভাবে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করলেও ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যাবে—তা জানার জন্য ইমাম মুনজিরির লিখিত ‘আত-তারগিব ওয়াত তারহিব’ পড়া যেতে পারে। তবে কোনো বিজ্ঞ আলেমের তত্ত্বাবধানে অধ্যয়ন সম্ভব হলে অধিক ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যায়।
এছাড়াও ইমাম নববি (রহ.) কর্তৃক সংকলিত অনবদ্য হাদিসগ্রন্থ ‘রিয়াদুস সালেহিন’ও অধ্যয়নে থাকতে পারে। বিশেষত রিয়াদুস সালেহিনের ‘ফাযায়েল অধ্যায়’ একজন মুমিনের জন্য অসাধরণ ও চমৎকার জীবনযাপনের রসদ যোগাবে। গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ রয়েছে বেশ কয়েকটি। শায়খ আবু বকর আল-জাজায়েরির ‘মিনহাজুল মুসলিম’ গ্রন্থটিও অন্যন্য। এটি একজন মুমিনের পার্থিব জীবনকে গোছালো, শৃঙ্খল ও ভারসাম্যপূর্ণ করার চমৎকার দিক-নির্দেশক।দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক আমল করার ক্ষেত্রে পাঠকের অন্তত কিছুটা হলেও ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ন্যূনতম কিছু আমলের ধারা-নির্ঘণ্ট বর্ণনা করা হলো।
দৈনিক পালনীয় নেক আমল
• পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। • নামাজের জন্য ওজু করা। • ওজু ও নামাজের সময় মিসওয়াক করা। • জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। • সুন্নত নামাজগুলো আদায় করা (ইশরাকের নামাজ, তাহাজ্জুদের নামাজ, বিতিরের নামাজ)। • সকাল-সন্ধ্যার জিকির-আযকার। • রাত-দিনের জিকির-আযকার (ঘরে প্রবেশের দোয়া, ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া, মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া, টয়লেটে প্রবেশ ও টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া, পানাহারের দোয়া, ফরজ নামাজের শেষে পঠিতব্য দোয়া ইত্যাদি)। • ইমামের সঙ্গে আজানের শব্দাবলি উচ্চারণ।
সাপ্তাহিক নেক আমল
• জুমার নামাজ আদায়। • জুমাবার দিনে বা রাতে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। • জুমাবার দিনে বা রাতে বেশি বেশি দুরুদ শরিফ পড়া। • সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখা।
মাসিক নেক আমল
• প্রত্যেক মাসের তিনদিন রোজা রাখা (উত্তম হচ্ছে ‘বিযে’র দিনগুলোতে বা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা)।
বাৎসরিক বা মৌসুমি নেক আমল
• রমজানের রোজা রাখা। • মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করা। • দুই ঈদের নামাজ আদায় করা। • সামর্থ্যবান হলে হজ আদায় করা। • সামর্থ্যবান হলে জাকাত আদায় করা। • রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা। • শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা। • আশুরার রোজা রাখা এবং সঙ্গে একদিন আগে বা পরে আরও একটি রোজা রাখা। • আরাফার দিন রোজা রাখা। • জিলহজের প্রথম দশদিন বেশি বেশি নেক আমল করা ইত্যাদি।
বিশেষ কোনো সময়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন আমল
এছাড়াও আরো কিছু আমল রয়েছে, যেগুলো বিশেষ কোনো সময়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পৃক্ত নয়। বরং যেকোনো সময় আমলগুলো করা যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু আমল অন্তরকেন্দ্রিক আমল। আর কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল। যেমন- • মাকরুহ ওয়াক্ত ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ে নফল নামাজ আদায় করা। • নফল রোজা রাখা। • নফল উমরা আদায় করা। আল্লাহ্র জিকির করা। • কোরআন তেলাওয়াত করা। • দুরুদ পড়া। • দোয়া করা। • ইস্তিগফার করা। • পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। • আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। • দান-সদকা করা। • অসহায়কে সাহায্য করা। • মুসলমানদের মাঝে সালামের প্রচলন করা। • সচ্চরিত্রবান হওয়া। • জিহ্বা পবিত্র রাখা। • আল্লাহ্কে ভালবাসা। • আল্লাহকে ভয় করা। • আল্লাহর কাছে আশা-প্রত্যাশা করা। • আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল-ভরসা করা। • আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। • আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা। • আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি।
বিশেষ প্রেক্ষাপটকেন্দ্রিক আমল
আবার এমন কিছু আমল আছে, যেগুলো বিশেষ কোনো প্রেক্ষাপটকেন্দ্রিক; প্রেক্ষাপট পাওয়া গেলে সেসব আমল পালন করা শরিয়তসম্মত। যেমন- রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার নামাজ আদায় করা, হাঁচির উত্তর দেয়া, সালামের উত্তর দেয়া, দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা, ইস্তিখারার নামাজ আদায় করা, তওবার নামাজ আদায় করা, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামাজ আদায় করা, বৃষ্টির নামাজ আদায় করা, বিবদমান দুইপক্ষের মাঝে মীমাংসা করা, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা, কষ্ট ও বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করা ইত্যাদি।
দৈনিক চারটি আমল
আমাদের পূর্ববর্তী পুণ্যবান বা ‘সালফে সালেহিন’ একদিনে চারটি আমল পালন করাকে মুস্তাহাব মনে করতেন। সেগুলো হচ্ছে- • রোজা রাখা। • গরিব-দুঃখীকে খাওয়ানো বা তাদের সদকা দেওয়া। • মৃতের জানাজার নামাজে শরিক হওয়া। • রোগী দেখতে যাওয়া ও সেবা-শশ্রুষা করা। এসব প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এগুলো যে ব্যক্তির মাঝে একত্রিত হবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১০২৮)
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।