জেনে নিন হজ পালনের সঠিক নিয়মাবলী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ৩রা জুলাই ২০১৯ ১০:৪৮ অপরাহ্ন
জেনে নিন হজ পালনের সঠিক নিয়মাবলী

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি পবিত্র হজ। ইসলাম ধর্মে হজ পালনে সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর অন্তত একবার হজকে ফরজ করা হয়েছে। তাই প্রতিবছর জিলহ্বজ মাসে পবিত্র মক্কায় লাখ লাখ মুসলমান হজ পালন করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই হজ পালনের সঠিক নিয়ম কানুন জানেন না। ফলে সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে অনেকেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। তাই জেনে নিন পবিত্র হজ পালনের সঠিক নিয়ম।

১। হজ কি? -হজ আরবি শব্দ। অর্থ নিয়ত করা, দর্শনকরা, সঙ্কল্প করা, এরাদা করা, গমনকরা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করাসহ কোনো মহৎ কাজে ইচ্ছা করা। শরীয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।

হজ কাদের উপর ফরজ?

(১) মুসলিম হওয়া।
(২) বালিগ হওয়া।
(৩) স্বাধীন হওয়া।
(৪) বিবেকবান হওয়া।

(৫) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যে ব্যক্তির এ পরিমাণ ধনসম্পদ আছে যে, সে হজের সফর (পথ খরচ) বহন করতে সক্ষম এবং তার অনুপস্থিতিকালীন তার পরিবারবর্গের প্রয়োজন মেটানোর মতো খরচও রেখে যেতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ। অথবা এমন ব্যক্তি যিনি হজের মৌসুমে অর্থাৎ শাওয়াল মাস শুরু হওয়া থেকে সৌদি আরবে অবস্থানরত ছিল এবং জিলহজ মাস পর্যন্ত সৌদি আরবে অবস্থান করতে থাকে এবং তার ওপর যদি কোনো বিধি-নিষেধ, ওজর ও অসুবিধা না থাকে তাহলে তার ওপরও হজ পালন করা ফরজ ইত্যাদি।

(৬) যাতায়াতে নিরাপত্তা।

(৭) মহিলাদের সাথে মাহরুম থাকা।

হজের ফরজ তিনটি-

১. ইহরাম বাঁধা অর্থাৎ হজ্বের নিয়ত করা। আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল হজওয়াল উমরাতা ওয়াজ জিয়ারাতা ফাইয়াস সিরহুলি ওয়াতা ক্কাব্বালহুমিন্নি-অর্থ ‘ হে আল্লাহ! আমি হজ উমরা এবং কাবা গৃহ তাওয়াফের জন্য নিয়ত করলাম।তুমি তা কবুল কর।

ইহরাম বাঁধার নিয়ম : হজ ও ওমরাহর আমলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম আমল হলো ইহরাম বাঁধা। ইহরাম বাঁধার নিয়ম হলো-হজ অথবা ওমরাহর নিয়তে সেলাইকৃত কাপড় খুলে সেলাই বিহীন দুটি চাদর পরিধান করে ‘তালবিয়াহ্’ পাঠ করা, শরীয়তের পরিভাষায় একেই ‘ইহরাম’ বলা হয়।

ইহরাম বাঁধার উত্তম পদ্ধতি হলো-যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে তখন প্রথমে গোসল অথবা অজু করবে, নখ কাটবে, বগল ও নাভীর নিচের চুল পরিষ্কার করবে এবং মাথা ও দাড়ি চিরুনি করে সর্ব বিষয়ে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবে।

ইহরামের জন্য দুটি নতুন অথবা ধোলাই করা পরিষ্কার চাদর হওয়া সুন্নত। একটি চাদর দিয়ে লুঙ্গি বানাবে। অন্যটি দিয়ে চাদর বানাবে। ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর নামাজের মাকরুহ সময় না হলে মাথা ঢেকে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। নামাজ পড়ে মাথার কাপড় খুলে ফেলবে এবং যেই হজের ইচ্ছা করবে মনে মনে সেই হজের নিয়ত করে ইহরামের ‘তালবিয়াহ্’ পাঠ করবে।

তালবিয়াহ উচ্চারণ : ‘লাব্বাইকাআল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদাওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুল্ক লা-শারীকালাক।’

২. জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজরের পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।

৩. তাওয়াফে জিয়ারাত অর্থাৎ মক্কা শরীফ পৌঁছার পর সর্ব প্রথম কাজটি হলো চারবার কাবা গৃহটি প্রদক্ষিণ করা আবার হজ্বের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরার সময় সর্বশেষ কাজ হলো তিনবার কাবা গৃহ প্রদক্ষিণ করে রওনা হওয়া।

হজের ওয়াজিব কাজ সাতটি-

১. সাফা ও মারওয়া উভয় পাহাড় সাত বার প্রদক্ষিণ করা।
২. মুজদালিফায় রাত যাপন করা।
৩. মিনায় তিনটি জামরাতে তিনদিনে প্রত্যেক জামরাতে ৭টি করে ৪৯টি পাথর শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপ করা।
৪. মিনার ময়দানে কোরবানি করা।
৫. মাথা মুণ্ডন করা।
৬. ফরজ তাওয়াফ শেষে ৩ চক্কর দেয়া।
৭. বিদায়ী তাওয়াফ করা।

প্রথম দিনের করণীয় কাজঃ (৮ই যিলহাজ্জ)

১. যিনি মক্কা মুকাররামাহ ও তার আশেপাশের স্থান থেকে আগমন করবেন তিনি নিজ অবস্থান থেকে হজের জন্যে ইহরাম বাঁধবেন, গোসল করে সুগন্ধী ব্যবহার করবেন এবং ইহরামের পোশাক পরিধান করবেন। এরপর হজের নিয়তে এ তালবিয়া পাঠ করবেনঃ লাইব্বাইকা হাজ্জান, লাইব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’ মাতা লাকাওয়াল মুলক লা শারিকা লাক (আমি হজের জন্যে হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির-আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নিয়ামত আপনারই, আর সকল বাদশাহী আপনার, আপনার কোনো শরীক নেই)।

০২. মিনা অভিমুখে রওয়ানা করবেন এবং মিনায় গমন করে যিলহাজ্জ মাসের নয় তারিখ ভোরে সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। মিনাতে আট তারিখ যোহর, আসর, মাগরীব ও ইশার নামাজ, এবং নয় তারিখ ফজরের নামাজ যথাসময়ে আদায় করবেন এবং চার রাকআত বিশিষ্ট নামাজ কসর করে আদায় করবেন।

দ্বিতীয় দিনের করণীয় কাজঃ (৯ ইযিলহাজ্জ)

১. সূর্যোদয়ের পরে আরাফাতের ময়দানের অভিমুখে রওয়ানা করবেন। আরাফাতের ময়দানে যোহরের সময় ও আসর নামাজ একত্রে কসর করে আদায় করবেন এবং মধ্যাহ্নের পূর্বে (পৌঁছা)সম্ভব পর হলে মসজিদে নামিরায় যাবেন।

২. নামাযের পর হাত উঠিয়ে কিবলামুখী হয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া ও যিকির করবেন।

৩. সূর্যাস্তের পর মুযদালিফা অভিমুখে রুওয়ানা করবেন, ওখানে পৌঁছার পর ইশার সময় মাগরীব ও ইশার নামাজ আদায় করবেন। কিন্তু ইশা কসর করে দু’ রাকাআত নামাজ আদায় করবেন এবং মুযদালিফায় ফজর পর্যন্ত রাত্রি যাপন করবেন।

৪. ফজরের ওয়াক্ত হলে ফজরের নামাজ আদায় করবেন, অতঃপর আলো উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত দোয়া ও যিকির করবেন।

৫. সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন।

তৃতীয় দিনের করণীয় কাজঃ (১০ই যিলহাজ্জ ঈদের দিন)

যখন মিনায় পৌঁছাবেন, জামারা আকাবায় যাবেন এবং তাতে পর্যায়ক্রমে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন, একটির পর অন্যটি এবং প্রত্যেক কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলবেন।

২. যদি সাথে হাদী (কোরবানীর পশু) থাকে তাহলে তা যবাই করবেন।

৩. মাথা মুণ্ডন করবেন অথবা চুল খাটো করবেন এবং এর মাধ্যমে প্রাথমিক হালাল হবেন। অর্থাৎ ইহরামের কাপড় খুলে তার সাধারণ পোশাক পরিধান করবেন এবং সুগন্ধী ব্যবহার করবেন।আর তার জন্য স্ত্রী সহবাস ব্যতীত ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ সমস্ত কাজ হালাল হয়ে যাবে।

৪. মক্কায় গিয়ে কা’বা শরীফে “তাওয়াফে ইফাদ্বাহ” করবেন। আর এটাই হচ্ছে হজ্জের (ফরয) তাওয়াফ। অতঃপর তামাত্তু হজকারী সাফামা এওয়াহতে হজের সা’য়ী করবেন। অনুরূপ যদি তামাত্তু হজকারী না হয়ে থাকেন কিন্তু তাওয়াফুল ক্বুদুমের পরসা ’ইয়ো করেন নি, তাহলে এখন সা’য়ী করবেন। আর এভাবে দ্বিতীয় বার হালাল হবেন এবং স্ত্রী সহবাসসহ ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ সমস্ত কাজ হালাল হয়ে যাবে।

৫. মিনায় ফিরে আসবেন এবং সেখানে (যিলহাজ্জ মাসের) একাদশ রাত যাপন করবেন।

চতুর্থ দিনের করণীয় কাজঃ (১১ই যিলহাজ্জ)

১. তিনটি জামারায় গিয়ে কংকর নিক্ষেপ করবেন। শুরুতে প্রথম জামারাতে, তারপর মধ্যবর্তী তারপর জামারা আকাবাতে (বড়টি)। প্রত্যেকটিতে সাতটি করে একটির পর আরেকটি কংকর নিক্ষেপ করবেন। প্রত্যেক কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলবেন। এ দিনের কংকর নিক্ষেপ করতে হবে মধ্যাহ্নের পর।

মধ্যাহ্নের পূর্বে নিক্ষেপ জায়েয নয়, এবং প্রথম জামারায় ও মধ্যবর্তী জামারায় কংকরে নিক্ষেপের পর দোয়া করার বিষয়টি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবেন।

২. এগার তারিখ দিনগত অর্থাৎ (দ্বাদশ)রাত্রটি মিনায় যাপন করবেন।

পঞ্চম দিনের করণীয় কাজঃ (১২ই যিলহাজ্জ)

১. চতুর্থ দিনের নিয়মে তিন জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করবেন।

২. এই তারিখে (আগে আগে) মিনা ত্যাগ করতে চাইলে সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা থেকে চলে আসবেন, আর দেরী করে আসতে চাইলে সেখানে রাত্রিযাপন করবেন।

ষষ্ঠ দিনের করণীয় কাজঃ (১৩ই যিলহাজ্জ)

বিশেষভাবে মিনা ছাড়তে যারা বিলম্ব করেছেন এই দিনটি তাদের জন্যে। এই দিনেঃ

১. তিন জামারাতে কংকর নিক্ষেপ করবেন যেভাবে পূর্বের দু’দিন করেছেন।
২. এরপর মিনা ছেড়ে চলে যাবেন।

হজের সর্বশেষ করণীয় কাজ হচ্ছে বিদায়ী তাওয়াজ করা। আর আল্লাহই সবচেয়ে অধিক জ্ঞাত।

হজের গুরুত্ব এবং ফযীলত

আল্লাহর নির্দেশ পালন: হজ একটি অন্যতম ফরজ ইবাদাত। হজ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ পালন হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা সামর্থবান মুসলিমের উপর হজ ফরজ করেছেন। কুরআনে এসেছে, ‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী’।(সূরাআলে ইমরান-৯৭)

যিকরুল্লাহ প্রতিষ্ঠা : হজ এমন একটি ইবাদাত যার প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর যিকর করা হয়। তাওয়াফ, সাঈ, রমঈলজিমার (পাথরনিক্ষেপ),মিনা, মুযদালিফাহ, আরাফাহসহ প্রত্যেকটি নির্দেশনায় আল্লাহর যিকরে ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারপর যখন তোমরা তোমাদের হজের কাজসমূহ শেষ করবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমরা স্মরণ করতে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে, এমনকি তার চেয়ে অধিক স্মরণ। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। বস্তত আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশ নেই।(সূরা আল বাকারাহ-২০০)।

হজ জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রান দান করে। মহানবী (সঃ) বলেন; মহান আল্লাহ আরাফাতের দিন যত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন অন্য কোনো দিনে এত লোককে মুক্তি দেন না।(মুসলিম)

হজ পালনকারী সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়:

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছি; যে ব্যক্তি হজ করে এবং হজকালে যৌন সংযম ও কোনো পাপাচারী কাজে লিপ্ত হয় না, সেই ব্যক্তি সদ্য মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)।

এক হাদীসে এসেছে, ‘তোমরা পর-পর হজ ও উমরা আদায় করো। কেননা তা দারিদ্র্য ও পাপকে সরিয়ে দেয়। যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লোহা-স্বর্ণ-রুপার ময়লাকে। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহিহ নাসায়ী)

হজ্জের এক মাত্র প্রতিদান জান্নাত:

হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত; মহানবী(সঃ)বলেন, এক উমরাহ হতে অন্য উমরাহ পর্যন্ত সময় গুনাহের কাফ্ফারা হয়। হজের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত। (বুখারী ও মুসলিম)

বিধর্মী হওয়া থেকে মুক্তিঃ

যাদের উপর হজ ফরজ হওয়ার পর হজ না করে মৃত্যুবরণ করবে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে।

রাসূল(সাঃ) বলেন, ‘যার উপর হজ ফরজ হল অথচ সে যদি হজ না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে কি ইয়াহূদী হয়ে মরল নাকি খ্রিষ্টান হয়ে মরল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’

উত্তম নেক আমলঃ

যারা সঠিকভাবে হজ সম্পাদন করবে তারা ইসলামের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে।

রাসূল (সাঃ)বলেন, ‘উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, ‘তারপর কী?’ তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ। (বুখারী)

একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রশ্ন করে আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদে ও অভিযানে যাব না? তিনি বললেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দরতম জিহাদ হল ‘হজ ’, তথা মাবরুর হজ ।” (বুখারী)

আল্লাহর উদ্দেশ্য পূর্ণঃ

আল্লাহ পাক মানুষকে এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করবে। যারা হজ করবে তাদের সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে।

মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ লাভঃ

যারা হজ পালন করবে তারা আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে। এই ব্যাপারে মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন, ‘আমার মৃত্যর পর যে হজ করল আর আমার কবর যিয়ারত করল সে যেন আমার সাথে জীবিত অবস্থায় সাক্ষাৎ করল।’

আল্লাহর নৈকট্য লাভঃ

হজ ব্রত অবস্থায় আল্লাহর একজন প্রিয়বান্দা বিভিন্ন ধরনের আমল পালন করে। আল্লাহর যিকির করে থাকে। কাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করে থাকে। এসকল আমলের মধ্য দিয়ে একজন বান্দা অতি সহজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।

চারিত্রিক বিশুদ্বতাঃ

হজব্রত অবস্থায় মানুষ সহজে তার চারিত্রিক বিশুদ্ধতা অর্জন করতে পারে। কারণ হজ অবস্থায় ঝগড়া করা, হাঙ্গামা সৃষ্টি করা, গীবত করা, হিংসা করা, কৃপণতা প্রদর্শন করা, অপচয় করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ব।

তাই হাজীগণ এই সময় এসকল খারাপ কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করেন এবং এর দ্বারা সে তার চরিত্রকে পূত-পবিত্র করতে পারে।

সামগ্রিক ইবাদত পালনঃ

নামাজ এবং সাওম হল কেবল দৈহিক ইবাদত আর যাকাত হল আর্থিক ইবাদত। আর হজ এমন একটি ইবাদত যা কিনা দৈহিক এবং আর্থিক উভয় ইবাদতের সমন্বয়ে সাধিত হয়।

তাই রাসূল (সাঃ) বলেন, “উত্তম জিহাদ হল হজ ”।

আখিরাতের কথা স্মরণঃ

হজের প্রত্যেকটি কাজ মানুষকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ১. এহরামের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে হজের সফরে রওয়ানা হওয়া কাফন পরে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

হজের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়া আখেরাতের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়ার প্রয়োজনয়ীতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এহরাম পরিধান করে পুত-পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্য ‘লাব্বাইক’ বলাসমস্ত গুনাহ-পাপ থেকে পবিত্র হয়ে পরকালে আল্লাহর কাছে হাজিরা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আরো স্মরণ করিয়ে দেয় যে এহরামের কাপড়ের মতো স্বচ্ছ-সাদা হৃদয় নিয়েই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে।

বদলী হজ

যে সকল মুসলিম নর-নারীর উপর হজ ফরজ ছিল, তাদের মধ্যে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে অথবা জীবিত কিন্তু শারিরীক দুর্বলতা ও অসুস্থতা ও অমতার কারণে হজ করতে অপারগ হয়, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞ আলেম বা হজে পারদর্শী ব্যক্তি দ্বারা তার বদলী হজ করাতে পারবে। অর্থাৎ যার জন্য বদলী হজ করা হবে তারই নামে ইহরাম পরিধান ও নিয়্যাত করে অন্য একজন হজ আদায় করতে পারবে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব