যাকাত বিষয়ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ কথা ও যাকাত আদায়ে প্রচলিত ভুল গুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে মে ২০১৯ ০৭:৫২ অপরাহ্ন
যাকাত বিষয়ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ কথা ও যাকাত আদায়ে প্রচলিত ভুল গুলো

“আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি, তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছাধীন” (সূরাহ হাজ্জ ২২: ৪১)

সামর্থ্য আছে এমন সকল মুসলিম এর ওপর যাকাত আদায় করা ফরজ। আর এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত এর ক্ষেত্রে কোন ভুল-ত্রুটি কাম্য নয়। বিশেষ করে যাকাতের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু প্রচলিত ভুল লক্ষ করা যায়। যেগুলোর কারণে যাকাত আদায়ের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে পারেন আপনিও।

যাকাত আদায়ে প্রচলিত ৯ টি ভুল দেখে নিন -

১. রমজান মাসেই যাকাত আদায় করতে হবে – এ ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ যাকাতবর্ষ বলে একটি বিষয় আছে। অর্থাৎ আপনার যাকাতবর্ষ ঠিক যে সময়ে পূর্ণ হবে তখনই আপনার পরবর্তি যাকাত আদায় করতে হবে। সেক্ষেত্রে রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করলে বাকি মাসগুলোর যাকাত অনাদায়ী রয়ে যাবে। যাকাত পূর্ণতা পাবে না।

২. অনুমানের ভিত্তিতে যাকাত দেয়া – সম্পদ কম বেশি যাই হোক না কেন তার সঠিক হিসাব থাকা প্রয়োজন। অনেক সময় স্বর্ণ রোপ্যের নিসাব বা উটের সংখ্যার হিসেব বুঝতে না পারলে ইসলামি ফাউন্ডেশন এর দেয়া নির্ধারিত যাকাতের নিসাব অনুসরণ করতে পারেন। প্রয়োজনের নিকটবর্তী আলেমদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হোন। মোট কথা আপনার কাছে যেন যাকাতের হিসেব সম্পূর্ণ স্বচ্ছ থাকে।

৩. এক বছর অতিক্রান্ত অর্থ - অনেকের ধারণা, প্রতি টাকায় এক বছর অতিক্রান্ত হলেই সে টাকার যাকাত দেয়া যাবে। এটা জরুরী নয়। যেদিন যাকাতবর্ষ পূর্ণ হবে সেদিন হাতে নগদ টাকা যা থাকবে সবগুলোর ২.৫% যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। এমনকি একদিন আগে যে টাকা হাতে এসেছে এরও যাকাত দিতে পারেন।

৫. বাজারে প্রচলিত যাকাতের শাড়ি প্রদান - প্রথমত, যাকাত হিসেবে নগদ অর্থ আদায় করা উচিত। কারণ এর মাধ্যমে যাকাত গ্রহীতা তার সব ধরণের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। শাড়ি বা লুঙ্গি দিলেও তা যেন উন্নতমানের হয়। মোট কথা যাকাত আদায়ের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ অভাব পূরণ করা তা যেন যথার্থভাবে হয়।

৬. অন্য কেউ যাকাত আদায় করা – যে বা যিনি সম্পদের মালিক তিনিই নিজের সম্পদের যাকাত আদায় করবেন। অনেক সময় গোষ্ঠী, পরিবার বা কোম্পানী ভিত্তিতে একটি মালিকানা ধরে যাকাত আদায় করা হয়। সেক্ষেত্রে আলাদা সম্পদের পূর্ণাঙ্গ হিসেব অনুযায়ী না হলে সেই যাকাত পরিপূর্ণ হবে না।

৭. হাদীয়া বা পারিশ্রমিক যাকাত হিসেবে বিবেচনা করা – অনেক সময় বাড়ির ঘৃহকর্মীকে ঈদের বোনাস বা বেতনের অতিরিক্ত অর্থ টিপস দিলেও যাকাতের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে নেন অনেকেই। অর্থাৎ যে অর্থ আপনার কাছে কেউ কোন কিছুর বিনিময়ে পাবে তা যাকাত হবে না।

৮. সুদের অর্থে যাকাত আদায় – সুদী উপার্জন বা ঋণগ্রহিতার সুদের অর্থ মাফ করে দিয়ে কখনই যাকাত আদায় করা যায় না। এই সুদের অর্থ বিনা সওয়াবের আশায় দান করে দিতে হয়।

৯. উপযুক্ত মানুষকে যাকাত প্রদান করা – কুরআনে যাকাত গ্রহীতার ৮ টি খাত রয়েছে। যেমন- ফকীর, মিসকীন, আমেলীন, মুআলস্নাফাতুল (ইসলাম গ্রহন করতে ইচ্ছুক অমুসলিম) কুলুব, কৃতদাস, ঋণগ্রস্থ, আল্লাহর পথে, অসহায় মুসাফির। শুধুমাত্র এসব খাতেই যাকাত প্রদান করা যাবে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব