প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৫
আজকের বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত, বৈষম্য ও অনৈতিকতার মধ্যে ইসলামের শিক্ষা মানবতার জন্য এক আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, ন্যায়বিচার ও সহমর্মিতার যে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা আজকের সমাজেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ইসলামের মূল শিক্ষা হচ্ছে শান্তি ও মানবকল্যাণ, যা প্রত্যেক মুসলমানের জীবনাচরণে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে ইসলামিক চিন্তাধারার নবজাগরণ দেখা যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় ‘গ্রিন ইসলাম’ আন্দোলন পরিবেশ রক্ষায় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে এনেছে। মসজিদগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণে নির্মাণ করে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে স্থানীয় আলেমরা। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, পরিবেশ সংরক্ষণ মানবতারই এক অংশ, কারণ আল্লাহর সৃষ্টিকে রক্ষা করা ইমানের একটি শাখা।
অন্যদিকে সৌদি আরব সরকার মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন এলাকায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে ইসলামিক নীতির আলোকে সমাজকে শুদ্ধ রাখার একটি সুস্পষ্ট প্রয়াস। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যে জিনিস তোমার ক্ষতি করে, তা থেকে দূরে থাকো।” এই শিক্ষা মুসলিম সমাজকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযমের পথে পরিচালিত করে।
বাংলাদেশেও ইসলামিক চেতনার পুনর্জাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। হজ শেষ করে দেশে ফেরা হাজিদের মধ্যে ইসলামী জীবনযাপনের নতুন অঙ্গীকার দেখা গেছে। মসজিদগুলোতে নামাজে উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে, তরুণ প্রজন্ম ইসলামি সংস্কৃতি ও হালাল জীবনধারার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ইনিউজ৭১-এর এক জরিপে দেখা গেছে, যুবসমাজ এখন ধর্মীয় মূল্যবোধকে আধুনিক জীবনের সঙ্গে সমন্বয় করতে চায়।
বিশ্বজুড়ে ইসলামভিত্তিক মানবিক কর্মকাণ্ডও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামিক রিলিফ সংস্থাগুলো গরিব ও অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। ইসলামী দানব্যবস্থা—যাকাত ও সদকার চেতনা—আজও মুসলিম সমাজের সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
ধর্মীয় পণ্ডিতরা মনে করেন, ইসলাম শুধু আখেরাতের পথ দেখায় না, বরং দুনিয়ার জীবনকেও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার নির্দেশ দেয়। কাজেই মুসলমানদের উচিত কর্মে, কথায় ও ব্যবহারে ইসলামের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যার চরিত্র উত্তম।”
আজকের ইসলামি শিক্ষা আমাদের শেখায়—মানুষের সেবা করাই ইবাদতের একটি রূপ। সমাজে শান্তি, ন্যায়বিচার ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী মূল্যবোধকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা জরুরি। ইসলামের মর্মবাণীই হচ্ছে মানবতার পুনর্জাগরণ, যা অন্ধকারে আলোর মতো পথ দেখায়।
মুসলিম উম্মাহর এই জাগরণ যদি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলে, তবে ইসলাম আবারও পৃথিবীতে ন্যায়, শান্তি ও মানবতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে—যেমনটি ছিল প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ে।