প্রকাশ: ৯ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৪৫
ইসলামে নামাজকে বলা হয়েছে ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার নামাজ কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজ শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং এটি মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত: ৪৫)।
আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেকেই নামাজকে কেবল রমজান বা বিশেষ উপলক্ষে সীমাবদ্ধ রাখে। কেউ কেউ আবার অলসতা বা ব্যস্ততার অজুহাতে নামাজ বাদ দেয়। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্যকারী বিষয় হলো নামাজ। যে নামাজ ত্যাগ করে, সে কুফরি করেছে।” (সহিহ মুসলিম)। এই হাদীসের গভীর অর্থ হলো, নামাজ ত্যাগ মানে ইসলামের মূল ভিত্তি থেকে সরে যাওয়া।
নামাজ শুধু আখিরাতের জন্য নয়, বরং দুনিয়ার জীবনেও প্রশান্তি ও সাফল্যের পথ খুলে দেয়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, নিয়মিত নামাজ আদায় শরীরের জন্য উপকারী, মনকে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। একজন নামাজি ব্যক্তি সব সময় আল্লাহর স্মরণে থাকে, ফলে তার জীবনেও আসে এক ধরনের সুকোমল শৃঙ্খলা ও আত্মিক শক্তি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে যেন পুরো রাত ইবাদত করল।” (সহিহ মুসলিম)। এ হাদীস আমাদের মনে করিয়ে দেয় নামাজের অপরিসীম মর্যাদা। অথচ আজ আমরা এই ইবাদতকে অবহেলা করছি, যা আমাদের আত্মিক জীবনে এক অন্ধকার সৃষ্টি করছে।
একজন মানুষ যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করে, তবে তার ভেতরে শৃঙ্খলা, সময়নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে। সমাজে অপরাধ, দুর্নীতি বা অন্যায় কমাতে নামাজের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ নামাজ মানুষকে আল্লাহভীরু করে তোলে, আর আল্লাহভীরু মানুষ কখনো অন্যায়ে জড়ায় না।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, “নিশ্চয়ই আমি মানুষকে ও জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।” (সূরা যারিয়াত: ৫৬)। তাই নামাজ শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যেরও প্রতিফলন। নামাজই মানুষকে আল্লাহর নিকট নিয়ে যায় এবং পাপ থেকে রক্ষা করে।
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে নামাজ ভুলে যাওয়া যেন এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার— একদিন এই জীবন শেষ হবে, তখন নামাজ সম্পর্কে আল্লাহর সামনে জবাব দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন বান্দার প্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের বিষয়ে।” (সহিহ তিরমিজি)।
তাই এখনই সময় নিজেকে সংশোধন করার। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায়ের অঙ্গীকার করতে হবে। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্যে আসতে হবে, দুনিয়ার ব্যস্ততার মধ্যেও হৃদয়কে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে। নামাজই মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রশান্তি, শান্তি ও মুক্তির পথ।