প্রকাশ: ৪ জুন ২০২৫, ১১:১৮
মানুষ চেষ্টার পর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করে, কিন্তু সেই ফলাফলের উপর তার কোনো পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এখানে এসে একজন মুমিনের ভরসা হয়ে ওঠে আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতা। আল্লাহ বলেন, “যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট” (সূরা তালাক, আয়াত ৩)। অর্থাৎ, একজন বান্দা যখন সমস্ত সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করে এবং পরিশেষে আল্লাহর উপর নির্ভর করে, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য অপ্রত্যাশিত পথ খুলে দেন।
তাওয়াক্কুল মানে নির্ভরতা মানেই বসে থাকা নয়। বরং এটা এমন এক মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি, যা মানুষকে চেষ্টা ও দোয়াকে একসাথে করে। হযরত উমর (রাঃ) একদা কিছু লোককে কেবল নির্ভরতার কথা বলে অলস বসে থাকতে দেখে বলেছিলেন, “তোমরা প্রকৃত তাওয়াক্কুলকারী নও, তোমরা অলস।” অর্থাৎ চেষ্টা না করে শুধু ভরসার কথা বলা ইসলাম সমর্থন করে না।
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছেন। হিজরতের সময় তিনি গুহায় লুকিয়ে থেকেছেন, রাস্তায় পথপ্রদর্শক নিয়োগ করেছেন এবং অতঃপর আল্লাহর সাহায্যের জন্য দোয়া করেছেন। অর্থাৎ চেষ্টার পাশাপাশি তিনি তাওয়াক্কুল করেছেন।
আজকের সমাজে মানুষ যখন হতাশ, বিভ্রান্ত, অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে, তখন তাওয়াক্কুল মানুষকে সাহস ও আত্মবিশ্বাস দেয়। কারণ সে জানে, আল্লাহ তার অভিভাবক এবং একমাত্র ভরসাস্থল।
তাওয়াক্কুল ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শান্তি আনে। একজন মুমিন যখন নিজের রিজিক, রোগ, চাকরি, পরিবারসহ সব কিছু আল্লাহর হাতে সঁপে দেয়, তখন তার অন্তর থেকে দুশ্চিন্তা চলে যায়।
তাওয়াক্কুল মানুষকে অহংকার থেকে রক্ষা করে, কারণ সে জানে—সব অর্জনের মালিক আল্লাহ। একইভাবে তাওয়াক্কুল মানুষকে হীনমন্যতা থেকেও রক্ষা করে, কারণ সে জানে—যা চায় তা পেতে তার জন্য আছেন পরম করুণাময় রব।
অতএব, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের উচিত চেষ্টা করে আল্লাহর ওপর নির্ভর করা। তাহলেই আল্লাহ আমাদের এমন জায়গায় পৌঁছে দেবেন, যা আমরা কল্পনাও করিনি। তাওয়াক্কুল আমাদের জীবনের আলো, শান্তির বাণী এবং প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি।