ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে জাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষারও একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। জাকাত আদায়ের সঠিক নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য অপরিহার্য।
জাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলি:
৩. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া
৪. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া
৫. সম্পদে পূর্ণ মালিকানা থাকা
৬. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হওয়া
৭. ঋণমুক্ত অবস্থায় নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা
৮. সম্পদ এক বছর পূর্ণ হওয়া
সোনা (৭.৫ তোলা বা ৯৫.৭৪৮ গ্রাম), রুপা (৫২.৫ তোলা বা ৬৭০.২৪ গ্রাম), নগদ টাকা, ব্যবসায়িক পণ্য, পালিত পশু (নির্দিষ্ট সংখ্যায়) ইত্যাদি। বর্তমানে রুপার নিসাবকে (সাড়ে ৫২ তোলা) পরিমাপক ধরা হয়, যা প্রায় ৬৭০ গ্রাম রুপার বর্তমান বাজারমূল্য।
সম্পদের মোট মূল্যের ২.৫% বা ৪০ ভাগের ১ ভাগ জাকাত দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কারো কাছে ১০ লক্ষ টাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলে তাকে ২৫,০০০ টাকা জাকাত দিতে হবে।
কোরআনে বর্ণিত ৮টি খাত হলো - ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী, নতুন মুসলিম, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং মুসাফির। তবে বর্তমানে প্রধানত প্রথম দুটি খাতেই জাকাত দেওয়া হয়।
জাকাত দেওয়া যাবে না যাদের:
অমুসলিম, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, বনু হাশেম বংশীয়, মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী বা স্বামী। তবে ভাই-বোন, চাচা-ফুফু, খালা-মামা ইত্যাদিকে জাকাত দেওয়া যাবে যদি তারা প্রয়োজনীয় হন।
জাকাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি:
১. সম্পদের সঠিক হিসাব করা
৩. গ্রহীতাকে মালিক বানিয়ে দেওয়া
৪. সম্ভব হলে গ্রহীতার প্রকৃত প্রয়োজন মেটানো
৫. প্রকাশ না করে গোপনে দেওয়া উত্তম
- মসজিদ/মাদরাসা নির্মাণে জাকাত দেওয়া
- মৃতের দাফন-কাফনে ব্যবহার করা
- গ্রহীতার প্রকৃত প্রয়োজন না বিবেচনা করা
জাকাতের অর্থনৈতিক প্রভাব:
জাকাত ব্যবস্থা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূরীভূত হতে পারে। এটি সম্পদের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাকাত:
আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা, শেয়ার বাজার, বীমা ইত্যাদিতে জাকাতের হিসাব বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা প্রয়োজন। প্রভিডেন্ট ফান্ড, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড ইত্যাদির জাকাত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
জাকাতের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
জাকাত সম্পদ পবিত্র করে, মনের কৃপণতা দূর করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। এটি দানকারী ও গ্রহীতার মধ্যে সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করে।
পরিশেষে, জাকাত শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো গঠনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের উচিত জাকাত সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে তা সঠিকভাবে আদায় করা।