আলী আকবর ফারুকী
রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে মাহে রমজান আমাদের মাঝে আসে। রমজান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ মাস, যাতে রাব্বে কারিমের পক্ষ থেকে রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয়। উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় আকাশ ও জমিনের সব বরকতের দরোজা। এ মাসে মোমিন বান্দাগণ সত্যিকারার্থেই হৃদয়ে এক অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি অনুভব করেন। অনুভব করেন হৃদয়জুড়ে এক আত্নপ্রশান্তি ও আত্নতৃপ্তির ঢেকুর। সৃষ্টি হয় মহান মালিকের সন্তুষ্টির পথে চলার অনুপ্রেরণা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা।
মোমিনের দেহমনে প্রবাহিত হয় এক নৈসর্গিক হিমেল বাতাস। যার ছোঁয়ায় কঠোর ও পাষাণ হৃদয়ও নম্র, শান্ত ও প্রশান্ত হয়ে যায়। মোমিনের স্মৃতিপটে উদ্ভাসিত হয় জান্নাতের অপরূপ, অভূতপূর্ব, মনোমুগ্ধকর ও নয়ানাভিরাম দৃশ্য। হৃদয়ের ক্যানভাসে ছবি অঙ্কিত হয় চিরসুখের বাসস্থান জান্নাতের চিত্রসমূহের। এ সবই মাহে রমজানের প্রভাব। বক্ষমান প্রবন্ধে মানবজীবনে রমজানের প্রভাব সম্পর্কে সবিস্তারে আলোকপাত করা হলো—
ব্যক্তিজীবনে রমজানের প্রভাব
রমজান ব্যক্তিজীবনকে সুশৃঙ্খল ও পরিপাটি করে। নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে সব কাজ সম্পাদনে অভ্যস্থ হওয়া শেখায়। মানুষের আচার-আচরণ ও চরিত্রে দেখা দেয় এক অভূবপূর্ব পরিবর্তন। পরিলক্ষিত হয় আল্লাহর আনুগত্যের দিকে বিরামহীনভাবে ছুটে চলার দৃঢ় প্রত্যয়। মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, সুদ-ঘুষ ও ব্যভিচারসহ সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়।
পারিবারিক জীবনে রমজানের প্রভাব
মুসলিম পরিবারে মাহে রমজানের অপরিসীম প্রভাব আছে। ঝগড়া-বিবাদ ও কলহমুক্ত করে পারবারিক জীবনকে শান্তিময় করে তোলে রমজান। পরিবারে এক জান্নাতি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরিবারের সবাই শেষ রাতে আরামের শয্যা পরিত্যাগ করে উঠে যায়। তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। ঘরে ঘরে কোরআনের সুমধুর কণ্ঠের তেলাওয়াত ভাসে। এরপর বরকতময় সেহরি দস্তরখানায় পরিবেশন করা হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেহরি খাওয়ার দৃশ্য হৃদয় ও মনকে আন্দোলিত করে। ভোরের স্নিগ্ধতার নির্জন পরিবেশে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য ছোট-বড় সবার মসজিদে ছুটে চলার এক নয়ানাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়।
সমাজ জীবনে রমজানের প্রভাব
মাহে রমজানে সমাজের মুসলমানরা অত্যন্ত আগ্রহ ও নিষ্ঠার সঙ্গে রোজা পালন করে থাকেন। ফলে সমাজে স্বাভাবিকভাবেই শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসে। রমজান রোজাদারদের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি বৃদ্ধি করে। ফলে সবাই আপন কাজ-কর্মে অলসতা ছেড়ে গতিশীল হয়ে ওঠেন। আর কাজকর্মে গতি এলে সমাজের উন্নতি তরান্বিত হয়। রোজার মাধ্যমে তারা আল্লাহতায়ালার আদেশ-নিষেধ পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে জীবন পরিচালনা করেন।
রোজার প্রভাবে সমাজের মানুষ মিথ্যা, গীবত, পরনিন্দা, চোগলখুরি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, সুদ-ঘুষসহ সব ধরনের অপরাধ থেকে নিজেদের পবিত্র করে সুন্দর, শান্তিময়, সুখময় ও সুশৃঙ্খল সমাজ বিনির্মাণে ব্রতী হন।ফলে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও শংকা দূর হয়ে যায়। সামাজিকভাবে সবাই নিরাপত্তার চাদরে পরিবেষ্টিত হন। সত্যিকারার্থেই আমরা চূড়ান্তভাবে সফলতা অর্জন করতে পারব, যখন রমজানের প্রভাব ও আবেদনগুলো বাকি এগারো মাসে বাস্তবায়ন করতে পারব। নতুবা রমজান আসবে যাবে, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।