যে বিশেষ গুণে প্রকাশ পাবে ইমাম মাহদির পরিচয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ৮ই জানুয়ারী ২০২২ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
যে বিশেষ গুণে প্রকাশ পাবে ইমাম মাহদির পরিচয়

দুনিয়ার চূড়ান্ত পর্বে ঘটবে কেয়ামত। এর আগে ছোট-বড় অনেক নিদর্শন প্রকাশিত হবে। কেয়ামতের আগেই হজরত ইমাম মাহদি আলাইহিস সালাম আগমন করবেন। এটি কেয়ামতের একটি বড় নিদর্শন। তাঁর মাঝে ঘটবে চমৎকার সব গুণের সমাহার। তবে তাঁর মাঝে থাকবে একটি বিশেষ গুণ। যাতে তার পরিচয় প্রকাশ পাবে। তিনি হবেন মুসলমানদের একনিষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ন খলিফা। হাদিসে বর্ণিত সেই বিশেষ গুণ কী?


হজরত ইমাম মাহদি আলাইহিস সালামের গুণসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি প্রকাশ পাবে- ‘তাঁর বদান্যতা’। তিনি হবেন ঈর্ষণীয় দানশীল ও দয়ার অধিকারী। তিনি খুব বেশি দান-খয়রাত করবেন। একাধিক হাদিসে তা ওঠে এসেছে-


১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে নতুন কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলাম।নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতের মাঝে মাহদির আগমন ঘটবে, সে পাঁচ অথবা সাত অথবা নয় বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা প্রশ্ন করলাম, এই সংখ্যায় কি বুঝায়? তিনি বললেন- বছর।


মানুষ তার কাছে এসে বলবে- হে মাহদি! আমাকে কিছু দান করুন, আমাকে কিছু দান করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর সে (সাহায্য প্রার্থী) তার কাপড় বা থলেতে যত পরিমাণ বহন করে নিতে পারবে তিনি তাকে তত পরিমাণ দান করবেন।’ (তিরমিজি)হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার পরিবারের মধ্যে একজন লোক রাজাধিপতি হবে, তার নাম হবে আমার নামের অনুরূপ।’ (তিরমিজি)


২. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শেষ জমানায় একজন খলিফা হবেন সে ধন-সম্পদ বণ্টণ করবে এবং তা গণনা (করে বণ্টন) করবে না।’ (মুসলিম)


উল্লেখ্য হজরত ইমাম মাহদি আলাইহিস সালামের সময়ে আসমান থেকে মুষলধারে বৃষ্টিবর্ষণ হবে। জমিনে সব ধরনের ফল ও ফসল উৎপাদন হবে। মানুষের জীবন হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়। থাকবে না কোনো অভাব। সে সময় হজরত ঈসা আলাহিস সালামও ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে শাসক হিসেবে দুনিয়ায় অবতরণ করবেন। ধন সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও কেউ তা গ্রহণ করবে না। এ বিষয়টি অন্য একটি হাদিসে ওঠে এসেছে-


হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের মাঝে ঈসা ইবনু মারইয়াম আলাইহিস সালাম খুব অল্প সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচারক শাসক হিসাবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভঙ্গ করবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযয়া বাতিল করবেন। তখন এতই ধন-সম্পদের প্রাচুর্য হবে যে, কেউ তা গ্রহণ করবে না।’ (তিরমিজি, বুখারি, মুসলিম)


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত ভবিষ্যৎবাণীর আলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস হলো শেষ জমানায় প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদির আবির্ভাব সত্য। সাহাবি-তাবেয়ি থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সব স্তরের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম, ফকিহ ও হাদিসবিশারদগণও ইমাম মাহদি আলাইহিস সালামের আগমনের বিষয়টির প্রতি গভীর বিশ্বাস রাখেন।


কারণ মাহদি অর্থ ‘সুপথপ্রাপ্ত’। এটি কোনো নাম নয়; বরং এটি হলো ইমামের উপাধি। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁকে হকের প্রতি পথ দেখাবেন। তাঁর আরেকটি উপাধি হবে ‘জাবের’। কারণ তিনি উম্মতে মুহাম্মাদির আহত অন্তরে মলম লাগানোর কাজ করবেন কিংবা তিনি জালেমদের ওপর বিজয়ী হয়ে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে খতম করবেন।’ (আল-ইশাআ; পৃষ্ঠা : ১৯৩)