কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সাবেক দুই নেতার মতামত নিয়েই কমিটি গঠন করতে। এ নিয়ে প্রথম দিকে একাধিকবার বৈঠকও হয়। কিন্তু সোমবার ঘোষিত কমিটিতে দেখা যায়, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত একজনও পদ পাননি। এমনকি সোহাগ-জাকির যে তালিকা দিয়েছিলেন তা তালিকা থেকে কাউকে রাখা হয়নি। এরআগে সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি গঠনের নিদের্শ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে কমিটি গঠনের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পদ বঞ্চিত নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। গঠনতন্ত্রে বিবাহিতদের ছাত্রলীগে পদপদবী না পাওয়ার বিধান থাকলেও এবার রেকর্ড পরিমাণ বিবাহিতদের স্থান দেওয়া হয়েছে। সহ সভাপতি সোহানী হাসান তিথির দুই বিয়ে। সর্বশেষ বিয়ে করে একজন ব্যাংকের সঙ্গে ঘর করছেন। একই অবস্থা সহ সম্পাদক আঞ্জুমানারা অনু, রুশি চৌধুরীর। সাদিক খান এবং আরও দুইজন সহ সভাপতিসহ অন্তত ৬ জন বিবাহিত রয়েছেন কমিটিতে। পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী ছিল এমন নাম অন্তত ১৩ জন রয়েছেন কমিটিতে।
অস্ত্র নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এমন একজন হয়েছেন সহ সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের কনসার্টে আগুন দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত অন্তত ২০ জন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নিজ জেলায় ২২ জনকে নেতা বানানো হয়েছে। এদিকে, ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতার স্থান পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সহ-সভাপতি আবু সাঈদের নাম উল্লেখ করে লিখেছেন, সাঈদ বিবাহিত এবং বয়স নেই। এছাড়া শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে আজীবন বহিষ্কারের ছাত্রলীগের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিও তুলে ধরেছেন তিনি। এছাড়া আরেক সহ সভাপতি এস এম হাসান আতিকের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লিখেছেন, হাসান আতিক ৩৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম সোহাগ এক নেত্রীর নাম উল্লেখ না করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পদ পাওয়ার পর পরই বিএনপি নেতার মেয়ের আমাকে হুমকি দেওয়া দেখে আমি মোটেও অবাক হইনি। সেদিন যেমন বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই আওয়ামী লীগ সভাপতির মাথা ফাটিয়েছিল। বিষয়টা অনেকটা তেমনই। আমার দাদা-নানাকে গালি দিতে ইচ্ছে করছে, কেন তারা এলাকায় আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা না করলে তো আজ হয়তো এই পথে আসা হতো না।’
এছাড়া একটি ছবি দিয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের বিবাহিত সেই লাবণী।’ কমিটিতে উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে অংশ নেয়া আলোচিত আফরিন লাবণী। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এনায়েত হোসেন রেজা অনেকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ছেলের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘এক ভাগ শিবির-এক ভাগ ছাত্রদল-এক ভাগ বিবাহিত-এক ভাগ বয়সোত্তীর্ণ (২৯+), এক ভাগ বউ পিটিয়ে মারা সৈনিকরা পোস্ট পাইছে সেটা সমস্যা নয়; সমস্যা হলো আশিক নামে চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখার পদধারী একটা কর্মী পোস্ট পাইছে। ভিসির ছেলে বলে কি এলিয়েন জাদু হয়ে গেছে?’
এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক রকিবুল ইসলাম সাকিবের পদ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং এ সংক্রান্ত ছবি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন লিখেছেন, ‘ভাই আপনি জিতছেন। এই ছেলে বিবাহিত, এর নাম রকিবুল ইসলাম সাকিব। সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোভন ও রাব্বানীর কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক হয়েছে।’ ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন দাবি করে ফেসবুকে প্রমাণ দিয়ে লিখেছেন, ‘চাকুরীজীবী! সৃজন ভুঁইয়া, সহ-সভাপতি। ভালোতো ভালো না...।’
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।