ইসলামের ইতিহাসে অনেক সাহাবী নিজেদের ঈমান এবং নীতির জন্য অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক শোকরবিহীন সাহসী চরিত্রের নাম হলো আবদুল্লাহ ইবন হুযাফাহ আস-সাহমী (রা)। তিনি ছিলেন মহান প্রফেট মুহাম্মদ (সা) এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাহাবী এবং রাসুল (সা) এর বার্তাবাহক। উমর (রা) এর শাসনকালে রোম সম্রাটের কাছে বন্দি হন তিনি, যেখানে তাকে এক কঠিন ঈমানী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
রোম সম্রাট আবদুল্লাহ (রা)-কে জীবিত বন্দি রেখে তার কাছে ইসলামের বিরুদ্ধে খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণের প্রস্তাব দেন। সম্রাট বলেন, "যদি তুমি খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণ কর, তবে আমি তোমাকে মুক্তি দেব এবং সম্মানিত জীবন দিব।" কিন্তু আবদুল্লাহ (রা) উত্তরে বলেন, "তোমার প্রস্তাব থেকে মৃত্যুই আমার কাছে হাজার গুণ প্রিয়।" এর পর সম্রাট তাকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দিতে থাকেন। প্রথমে তাকে তীরন্দাজদের সামনে দাঁড় করানো হয় এবং তাদের তীর আবদুল্লাহ (রা) এর কাছাকাছি ছোড়া হয়, কিন্তু তিনি একটুও নড়ে-চড়ে না।
বিষাক্ত তেলের পাত্রে মুসলিম বন্দীদের ভাসানোর পর আবদুল্লাহ (রা) যখন দেখলেন, তখন তাঁর মনে কোনো কম্পন তৈরি হয়নি। তখন সম্রাট আবদুল্লাহ (রা) কে খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণের জন্য আবার চাপ দেন। এ পরিস্থিতিতে আবদুল্লাহ (রা) তাঁর ঈমানের প্রতি অটল ছিলেন এবং বলেন, "আমি যদি আল্লাহর পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করি, তবে কি এক জীবনের তুলনায় এই পৃথিবী যা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, তা যথেষ্ট হবে?" তিনি আরও বলেন, "আমি চাই, আমার শরীরের প্রতিটি লোম যেন আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গের সুযোগ পায়।"
সম্রাট এরপর তার প্রস্তাব থেকে সরে এসে আবদুল্লাহ (রা) কে মুক্তি দিতে রাজি হয়, তবে একটি শর্তে যে, তিনি তার কপালে চুমু খাবেন। আবদুল্লাহ (রা) তখন বললেন, "আমি যদি মুসলিম বন্দীদের মুক্তি পাওয়ার শর্তে তোমার কপালে চুমু খেতে রাজি হই, তবে আমি তা করব।" সম্রাট সেই শর্তে রাজি হয়ে সকল মুসলিম বন্দীদের মুক্তি দেন।
এই ঘটনা জানার পর, হযরত উমর (রা) আবদুল্লাহ (রা)-কে মদিনায় ফিরে আসার পর তাকে সম্মান জানিয়ে তার মাথায় চুমু খান।
এ ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিদ্যমান। আবদুল্লাহ ইবন হুযাফাহ (রা)-এর এই দৃঢ় ঈমান এবং আত্মবিশ্বাস তাঁর অনুপ্রেরণাকে চিরকাল জীবন্ত রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।