চুপচাপ এসে টিউলিপের নানা তথ্য নিয়ে গেলো ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: রবিবার ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৫০ অপরাহ্ন
চুপচাপ এসে টিউলিপের নানা তথ্য নিয়ে গেলো ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ

ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) লেবার পার্টির সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। বাংলাদেশি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে এক গোপন বৈঠকের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এনসিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে নতুন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা তার ব্যাংক হিসাব, ই-মেইল রেকর্ড ও অন্যান্য আর্থিক কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য যথেষ্ট। এমনকি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  


অভিযোগ উঠেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে টিউলিপ ও তার পরিবার ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন। উল্লেখ্য, এ প্রকল্পে ৯০ শতাংশ ঋণ এসেছে রাশিয়া থেকে। ২০১৩ সালে চুক্তির সময় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিকের ছবি প্রকাশিত হয়, যা তদন্তকারীদের নজর কেড়েছে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এই অর্থ লেনদেনের বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।  


এনসিএ চাইছে, বাংলাদেশের সরকার তাদের সহায়তা করুক, যাতে আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। ব্রিটেনের ব্রাইবারি অ্যাক্ট ২০১০ অনুযায়ী, কেউ যদি বিদেশে ঘুষ গ্রহণ করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্রিটেনের আইনে মামলা হতে পারে এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এ কারণে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে।  


অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ সিদ্দিক গত মাসে লেবার পার্টির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তিনি শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই এবং এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। অন্যদিকে, লেবার পার্টির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, তাই তারা বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায় না।  


এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিএ ও ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আগামী সপ্তাহে নতুন কিছু তথ্য প্রকাশিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ মিডিয়া সূত্র জানিয়েছে, এনসিএর কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য যাচাই করছেন।  


বিশ্লেষকদের মতে, রূপপুর প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে এটি ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকার যদি এনসিএকে সহযোগিতা না করে, তবে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  


এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধীদলীয় কয়েকজন এমপি এই তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যে কেউ, সে যে দেশেই থাকুক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে সরকারপক্ষের অনেকে বলছেন, তদন্ত চলার আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।  


বিশ্ব রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই তদন্ত শুধু টিউলিপ সিদ্দিকের জন্য নয়, বরং রূপপুর প্রকল্পে সম্পৃক্ত আরও অনেকের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। কারণ, এই প্রকল্পের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আগে থেকেই নানা প্রশ্ন উঠছিল। এখন এনসিএর তদন্ত সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার পথ উন্মুক্ত করেছে।