খাওয়ার পানিই মৃত্যু পরোয়ানা বয়ে নিয়ে আসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এই গ্রামে। পানিবাহিত কিডনি রোগে আক্রান্ত গোটা গ্রাম। গত দুই দশকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে এখানে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৮০ জনের। রাজ্যের বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত জেলা বীরভূমের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে রয়েছে পাইকপাড়া গ্রাম। পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী এই গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০। বেশির ভাগ মানুষই এখানে কৃষিজীবী।সম্প্রতি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে পাইকপাড়ার এক গ্রামবাসীর। সংবাদমাধ্যমের কাছে জানতে পেরে গ্রামে যান রামপুরহাটের বিধায়ক ও কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
গ্রাম সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় ২০ বছর ধরে কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। শেষ দু’বছরেই ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই তালিকা তারা তুলে দেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। এ ছাড়া বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলছে এমন ৩৯ জনের তালিকাও দেওয়া হয় কৃষিমন্ত্রীকে। চিকিৎসকদের মতে, পাইকপাড়ার মানুষের কিডনির সমস্যা হচ্ছে খাওয়ার পানি থেকে। এবং তা থেকে মৃত্যু অবধারিত জেনেও বাধ্য হয়েই সেই পানিই পান করে চলেছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ৮ থেকে ৮০ সবাই এখানে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সোনার গয়না, গরু, ছাগল, জমি-জায়গা বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। অর্থাভাবে অনেকে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই মৃত্যুর দিন গুনছেন। এবং সব জেনেও স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গ্রামবাসীদের আরও বক্তব্য, রামপুরহাট শহরের এত কাছেই এমন সমস্যা থাকলেও কখনও কোনও জনপ্রতিনিধির দেখা পাওয়া যায়নি। পাইকপাড়ার এক বাসিন্দা হাসান মিঞাও কিডনি রোগে আক্রান্ত। তিনি বলেন, আমরা খুব আতঙ্কে আছি। মন্ত্রীর কাছে দাবি রেখেছি যেন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাই। রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের ধাপে ধাপে উন্নতি হয়ে বর্তমানে তা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিক পরমার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি চকমণ্ডলা হাসপাতালে বিএমওএইচের সঙ্গে কথা বলে জানব।
তিনি আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে আসেনি। কিন্তু দফতরের তরফ থেকে পানি পরীক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। প্রসঙ্গত, কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি ২০০১ সাল থেকে এই এলাকার বিধায়ক। এই গ্রামে বহু বার এসেছি। তখনও কেউ আমাকে জানায়নি। এ নিয়ে আমি সার্বিক আলোচনা করব। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানাব। আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।