কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলার পর কাশ্মীরিদের ওপর ক্ষেপে গেছে পুরো ভারত। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারীকে কাশ্মীরিদের ওপর প্রতিশোধমূলক আচরণ করছে। হুমকি-ধমকি ও হামলা চালাচ্ছে। পুরো ভারতেই এখন এ চিত্র। কাশ্মীরিদের দেখলেই ‘দেশদ্রোহীদের গুলি কর’ বলেই হামলে পড়ছে তারা। রাজ্যে রাজ্যে মারধর ও গণধোলাইয়ের শিকার হচ্ছেন কাশ্মীরিরা। ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। কাশ্মীরে হামলা, হুমকি ও ঘর থেকে জোর করে বের করে দেয়ার ভয়ে হিমালয়ের পাদদেশে লুকিয়ে থাকছেন অনেকে। জম্মুতে জনতার হামলায় অন্তত ৩৭ জন কাশ্মীরি আহত হয়েছেন। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের কয়েকটি গাড়ি। এছাড়া রাজধানী দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, বিহার, পাঞ্জাবে কাশ্মীরিদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে সারা দেশে একঘরে হয়ে পড়েছে ভারতের নির্যাতিত এ জনগোষ্ঠী।
এমন পরিস্থিতিতে কাশ্মীরিদের সুরক্ষার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। খবর এনডিটিভি ও আলজাজিরার। কাশ্মীরিদের ওপর হামলা ঠেকাতে জম্মুতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে হামলার প্রতিবাদে রোববার শ্রীনগরসহ কাশ্মীর উপত্যকায় হরতালের ডাক দিয়েছে স্থানীয়রা। উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ভাড়াটে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের বাড়ি ত্যাগের নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিছু শিক্ষার্থী। পাঞ্জাবের আম্বালা শহরের কাশ্মীরিদেরও ২৪ ঘণ্টার নোটিশ দিয়েছে বাড়িওয়ালারা। নিসার আহমেদ (২৩) নামের এক ছাত্র জানান, দেরাদুনে কয়েকজন কাশ্মীরিকে গণধোলাই দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ‘দেশদ্রোহীদের গুলি করে হত্যা কর’ চিৎকার দিয়ে আক্রমণ চালায় তারা। পদার্থ বিজ্ঞানের এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, হামলার ভয়ে রুম থেকে বের হতে পারছি না। দেরাদুনের ভুগোলের ছাত্র মোহাম্মদ দাউদ (২৩) জানায়, ‘শুক্রবার রাতে আমাদের কক্ষে হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদীরা। আমি বাথরুমে লুকিয়ে কোনো রকমে বেঁচে যাই।’
বিহারের পাটনায় কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বশির আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘একদল লোক লাঠিসোটা হাতে আমার দোকানের সামনে হাজির হয়। তারা স্লোগান দিতে থাকে। তারা দোকানের জিনিসপত্র ধ্বংস করে আমাকে ও কর্মচারীদের মারধর করে।’ রাজধানী দিল্লিতে অবস্থানকারী সারা খোরশেদ (২৫) বলেন, ‘হামলার ভয়ে গত তিন দিন ধরে সর্বক্ষণ আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করেই থাকছি।’ বৃহস্পতিবারের ওই হামলার পর থেকে জম্মু শহরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জম্মুতে ক্ষুব্ধ লোকজন কারফিউয়ের মধ্যেই অনেকগুলো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসএমএসে সহায়তার বার্তা দিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। জানিপুরের আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে ডজনখানেক গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। জম্মুর তাবি এলাকায় কাশ্মীরিদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে উত্তেজিত জনতার হামলা চলাকালে পুলিশ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কাশ্মীরিরা।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলওয়ামার সন্ত্রাসী হামলার জেরে জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা হামলা ও হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদিকে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের আশঙ্কায় নিয়ন্ত্রণরেখায় থাকা ‘জঙ্গিশিবির’ সরিয়ে সেনা ছাউনির কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনাবাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী’ হামলার প্রতিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।