প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৪৭
বিবাহিত জীবনের ২৫ বছর পরেও কোনো সন্তান হয়নি। এজন্য সমাজ তাকে করেছিল একঘরে। গর্ভধারণ করতে না পারলে নাকি নারী পূর্ণতা পান না-এ ধারণা থেকে সমাজের কেউ তার সঙ্গে মিশত না। এ থেকে তার মনে জন্ম নিল ক্ষোভ। মনে মনে তিনি সমাজের প্রতি প্রতিশোধ নিতে চাইলেন। আর ক্ষোভ থেকে তিনি যা করলেন তাকে এনে দিল ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্নাটকের গুব্বি তালুকের বাসিন্দা বেকাল চিক্কাইয়ার সঙ্গে থিম্মাক্কার বিয়ে হয়েছিল। সন্তান না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে অনন্য এক সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঠিক করেন, গাছ লাগাবেন। আর তাদেরই বড় করবেন সন্তানস্নেহে।
থিম্মাক্কার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই। গ্রামের আর পাঁচজন দরিদ্র ভারতীয় নারীর মতোই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে রুটিরুজি চালানো এক নারী। ভূমিহীন দিনমজুর এই দম্পতি সমাজেও ছিলেন একঘরে। কথা বলার সমস্যা থাকায় স্বামী চিক্কাইয়াকে পড়শিরা বলত তোতলা চিক্কাইয়া। সমাজ বিচ্ছিন্ন স্বভাব-লাজুক চিক্কান্না আর থিম্মাক্কার দিনগুলো ছিল বেশ একলা, বিষণ্ণ। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেন সমাজের বঞ্চনার জবাব দেয়ার। তখনই মাথায় আসে গাছ লাগানোর বিষয়টি।যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথম বছরে ১০টি, দ্বিতীয় বছরে ১৫টি, তৃতীয় বছরে ২০টি বটগাছের চারা লাগালেন। এক সময় এই সন্তানদের দেখাশোনার জন্য দিনমজুরির কাজও ছেড়ে দেন চিক্কাইয়া। থিম্মাক্কা রোজগার করতেন আর বাড়ি ফিরে স্বামীর সঙ্গে সন্তানদের দেখভাল করতেন।
রোজ প্রায় চার কিলোমিটার পেরিয়ে তারা এই গাছগুলোতে পানি দেয়ার কাজ করতেন। গবাদি পশুর হাত থেকে চারাগাছগুলোকে বাঁচাতে কাঁটাতারের বেড়াও বানিয়ে দেন। এভাবে তার গ্রাম হুলিকাল থেকে কুদুর অবধি ২৮৪টি বটগাছের চারা লাগিয়ে বড় করেছেন তিনি। প্রায় চার কিলোমিটার পথ জুড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াময় সুবিশাল গাছগুলো থিম্মাক্কার ভালোবাসারই নিদর্শন মনে করেন পথচারীরা। ১৯৯১ সালে স্বামী মারা যান। এরপর থেকেই গাছগুলোর পরিচর্যার ভার তার ওপর এসে পড়ে। তার কাজের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গ্রামবাসীরা তাকে ‘সালুমারাদা’ বলে ডাকতে শুরু করেন। কন্নড় ভাষায় যার অর্থ ‘গাছেদের সারি।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর