ঝালকাঠির নথুল্লাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতিকালে প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন আটজন ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করেন। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনতা তাকে মারধর করে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আটকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে উত্তেজিত জনতার চাপের মুখে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির মধ্যেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অভিযোগ, মহড়ায় ভুলের অজুহাতে প্রধান শিক্ষক হঠাৎ বেত নিয়ে তাদের মারধর শুরু করেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে কেউ কেউ জ্ঞান হারায়। আহত ছাত্রীদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে চারজন ভর্তি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। অবৈধ অর্থ আদায়, গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাৎ, ও পরিচালনা কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।
প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান নামের আওয়ামী লীগপন্থী একজনকে কমিটির সভাপতি মনোনীত করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব জমা দেন। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপিপন্থী আইনজীবী আল আমিনের সঙ্গে তার বিরোধ চরমে ওঠে। বুধবার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি চলাকালে প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের মারধর করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা বিদ্যালয়ে জড়ো হয় এবং তাকে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহায়তায় প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "উত্তেজিত জনতা প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করে। আমরা ঘটনার তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।"
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করেন। হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি বলেন, "আমাকে অন্যায়ভাবে লাঞ্ছিত করে পদত্যাগ করানো হয়েছে।"
বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা জানান, তোফাজ্জেল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এলাকাবাসী এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মো. সাব্বির হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক গ্রুপিং করে পকেট কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকরা তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে আপত্তি জানান।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং তাদের মানসিকভাবে স্বাভাবিক করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণকে সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন।
এই ঘটনার জেরে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জনসাধারণ আশা করছে, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর না ঘটে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।