বিশ্ব ব্যাপী মহামারী করোনা আতংকে মানুষ।নভেল করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণ ঠেকাতে কক্সবাজার জেলা লকডাউন করার পর থেকে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। রোহিঙ্গাদের চলাফেলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে তারা। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য ও চিকিৎসাসহ শুধুমাত্র অতি গুরুত্বপুর্ণ মানবিক সেবার বাইরে সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সেবা কার্যক্রমে নির্দিষ্ট কর্মী ছাড়া দেশি-বিদেশি সকলের ক্যাম্পে যাতায়াত নিষিদ্ধ রয়েছে। ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশনের জন্য ৩০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আইসোলেশন শয্যা এক হাজারে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, কক্সবাজার লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র্যাব, পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা ও প্রচারে রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত রয়েছে। মানবিক সেবা কার্যক্রমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি ক্যাম্পে হাইজিন প্রমোশন বাড়ানো হয়েছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের সচেতন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনাগুলো মিয়ানমারের এবং ইংরেজি ভাষায় ভিডিও ক্লিপ, পোস্টার, লিফলেড এর মাধ্যমে সচেতন করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও হাইজিন প্রমোটাররা সচেতন করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
অন্যদিকে, করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের আলাদা করে রাখার জন্য ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশনের জন্য ৩০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা এক হাজারে উন্নীত করতে ক্যাম্পে আরো ৬টি স্থানে কার্যক্রম চলছে। ২৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে আইপিসির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের ৩৬ জন সদস্য ডব্লিউএইচও’র তত্ত্বাবধায়নে আইপিসির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ।
রোহিঙ্গারা বলছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘর থেকে বাইরে না যাওয়া, সাবান দিয়ে হাত মুখ ধোয়াসহ পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি কারো সাথে না মিশতে বলা হয়েছে এবং তারা তা মেনে চলছেন।কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোঃ নুর জানান, প্রথমে এই ভাইরাস সর্ম্পকে কিছু না জানলেও এখন বুঝতে পেরেছেন। তাই তারা ঘর থেকে বের হন না। কোথাও গিয়ে আড্ডা দেন না। আর একটু পর পর সাবান দিয়ে তারা হাত ধুচ্ছেন।মুছা নামের আরেক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, শুরুর দিকে মাস্ক পরতে খারাপ লাগত এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই কোনো জরুরি কাজে ঘর থেকে বের হতে হলে মাস্ক ব্যবহার করেন।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোঃওসমান জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে এই ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে ঝুঁকি থাকায় প্রশাসনের লোকজন তাদের ঘর থেকে বের হতে দেয় না। তাই কেউ চাইলেও ঘর থেকে বের হয়ে আড্ডা দিতে পারে না। একটু পর পর বিজিবি ও পুলিশের গাড়ি আসে। এ ছাড়া ক্যাম্পের মাঝিরাও কাউকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে দেয় না।
এ ব্যাপারে ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) এর মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধুমাত্র অতি গুরুত্বপুর্ণ মানবিক সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। করোনাভাইরাসের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণার কারণে রোহিঙ্গাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গারা অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পে আইসোলেশনের জন্য ৩০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা এক হাজারে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। ২৮০ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে আইপিসির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্তাবধানে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের ৩৬ জন সদস্য আইপিসির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছে।এছাড়াও শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশিদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ রয়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা ছাড়া সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর আগে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কক্সবাজারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন গত ৮ এপ্রিল গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পুরো কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন।
ইনিউজ ৭১/ জি.হা
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।