শূন্য হাতে দেশে ফিরলেন ১৩৭ সৌদি প্রবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ৬ই জানুয়ারী ২০২০ ০৫:৫২ অপরাহ্ন
শূন্য হাতে দেশে ফিরলেন ১৩৭ সৌদি প্রবাসী

লাখ লাখ টাকা খরচ করে ভাগ্য বদলের আশায় সৌদি আরব গেলেও শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন আরও ১৩৭ বাংলাদেশি নাগরিক। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে ৪৫৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফেরত এসেছেন। রবিবার রাত সাড়ে ১১ টা ও দেড়টায় সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি ৮০৪ ও এসভি ৮০২ বিমানে করে দেশে ফেরত আসেন তারা। তাদের অনেকে সৌদি আরবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুনামগঞ্জের নরোত্তমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকমিনা আক্তার (৩০) বলেন, মাত্র ৭ মাস আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরব গেলেও নিয়োগকর্তার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আকলিমা বলেন, ‘দৈনিক ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কাজ করলেও বেতন না দিয়ে আমাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে হুমকি দিত মালিক।’ ভয়াবহ নির্যাতনের কারণে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিলেন না গৃহকর্মী হিসেবে আট মাস আগে সৌদি যাওয়া হবিগঞ্জের হাসিনা (২৭)।

টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার সাদ্দাম হোসেন জানান, এক বছর আগে এসি টেকনিশিয়ানের কাজ নিয়ে চার লাখ দশ হাজার টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে চার মাস কাজ করলেও সঠিক বেতন পাননি তিনি। আকামা থাকার পরও কাজ থেকে ফেরার পথে পুলিশ আটক করে তাকে দেশে ফেরত পাঠায়। একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফিরেছেন সুনামগঞ্জের আবুল কালাম, চট্টগ্রামের সগির হোসেন, সিরাজুল কবির, সিলেটের ফুরকান, মো. শাহ আলম, রফিক, নোয়াখালীর শামসুদ্দিনসহ অন্যরা।

দেশে ফেরা অনেক কর্মী অভিযোগ করেন, আকামা তৈরির জন্য কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা প্রদান করা হলেও তারা আকামা করে দেননি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কফিলের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা কর্মীর দায় দায়িত্ব না নিয়ে ভিসা বাতিলের কথা বলে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলছে প্রশাসনকে। ফেরত আসাদের মধ্যে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে খাবার, পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া এই কর্মসূচির আওতায় বিদেশ থেকে ফেরত আসাদের কাউন্সেলিং ও আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করা হয়।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে ২৪ হাজার ২৮১ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর নতুন বছরের শুরুর চার দিনে ফিরলেন ৪৫৪ জন। এভাবে ব্যর্থ হয়ে যারা ফিরছেন তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত। আর কাউকে যেন প্রতারিত না হতে হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্র ও দূতাবাসকে। এ ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিকেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের নেয়া সাম্প্রতিক ১২ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে নারী কর্মীদের ওপর নিপীড়ন কমে আসবে।’

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব