আসুন রুখে দেই অসাধু সিন্ডিকেটদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রবাসী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: রবিবার ১৭ই নভেম্বর ২০১৯ ১০:৩০ পূর্বাহ্ন
আসুন রুখে দেই অসাধু সিন্ডিকেটদের

যে বাংলায় শেরে বাংলা ছিলেন সেই বাংলায় ‘পেঁয়াজে বাংলা’ উপাধি কাকে বা কাদেরকে দেয়া যায় ভাবনার বিষয় তাই প্রথমেই কিছু ভূমিকার প্রয়োজন আছে। পেঁয়াজের মতো সহজলভ্য একটি দ্রব্য নিয়ে রান্নাঘর থেকে সংসদ পর্যন্ত দেশের সর্বোত্ত এমন লঙ্কাকান্ড বিশ্বের আর কোথাও ঘটেছে কিনা জানা নাই। আর এ জন্য দায়ী কারা? সরকার, অসাধু ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট নাকি পেঁয়াজভোগী বা ভুক্তভুগীরা?

পেঁয়াজ বিশ্বে অতি সহজলভ্য: শীতের দেশ ইউরোপে পেঁয়াজ চাষ হয় না। সাধারণত মিশর তিউনিশিয়া সহ এশিয়ান বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে পেঁয়াজ আমদানি হয়। দাম বাংলাদেশি টাকায় ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা কিলো হয়ে থাকে। বিক্রয়মূল্যে অবশ্যই ট্রান্সপোর্ট, আমদানি খরচ, কর্মচারী, দোকান ভাড়া অন্তর্ভুক্ত তারপরও নিশ্চয় কিছু লাভ হয়। তাহলে ক্রয় মূল্য কত হতে পারে? কত হতে পারে পেঁয়াজের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য? তাহলে বাংলাদেশে কেন সম্ভব নয়? আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের মূল্য অনেক কম আর তাই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলেও বাংলাদেশের পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। এখানে উল্লেখ্য যে, সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নে খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রায় সমান। তাহলে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই কেন? সিন্ডিকেটের কারণে? তাহলে সরকার কি করছে? তা বোঝা যায় বাণিজ্যমন্ত্রীর “পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আছে” মন্তব্যের মধ্য দিয়ে। পেঁয়াজের দাম আজ দাম ২০০ টাকা। তাহলে কি এই কারসাজির সাথে সরকারের লোকজনও জড়িত?

উন্নত দেশগুলোতে কোনো সিন্ডিকেট হয় না। কারণ হিসেবে প্রথমে উল্লেখযোগ্য যে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে উন্মুক্ত কিন্তু স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা রয়েছে। বাজার উন্মুক্ত এবং প্রতিযোগিতা মূলক রাখতে সিন্ডিকেট বিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থা রয়েছে। সিন্ডিকেট ধরার জন্য এরা খুবই তৎপর। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ও একটি নিজস্ব সংস্থা রয়েছে। অনেক সময় সিন্ডিকেট করার কারণে অনেকে ধরা পড়ে, তখন মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো জরিমানা গুনতে হয় আর এইজন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করতে ভয় পায় কিন্তু আমাদের দেশে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জনগণ মনে করে যে এই সিন্ডিকেটের সাথে সরকারের কিছু অসৎ রাজনীতিবিদ জড়িত থাকতে পারেন।

তাহলে এই সিন্ডিকেট ভাঙতে অবশ্যই ভুক্তভোগীদের, জনগণের ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিন্ডিকেটদের বর্জন করতে হবে। পেঁয়াজ এমন কিছু না যে না খেলে বাঁচা যাবে না। হয়তো খাবারের টেস্ট কম হবে। তাহলে বেড়ালের গলায় ঘন্টা পরাবে কে? সাধারন জনগনের তো কোন প্ল্যাটফর্ম নেই, কোন সংগঠন নেই, কোনো নেতা নেই। তবে একটা সুযোগ আমাদের আছে আর সেটা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ফেসবুক –হোয়াটসঅ্যাপ, আর স্মার্টফোন তো সবারই আছে। এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিন্ডিকেটের বর্জনের আহবান জানানো, সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা ,নিজে বর্জন করা এবং অন্যদেরকে সিন্ডিকেটদের বর্জন করতে উৎসাহ, উদ্বুদ্ধ করা।

পেঁয়াজ এমন কোন জীবন রক্ষাকারী খাদ্য না যেটা না খেলে মানুষ মারা যাবে! জাস্ট একটা সপ্তাহ ঐক্যবদ্ধ ভাবে একসাথে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত থাকলে ঠিকই পেঁয়াজের দাম সুড়সুড় করে ৬০/৬৫ টাকায় চলে আসবে। তাছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী, তাহলে আমরা কেন পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হই না? আমাদের সকলের যার যেখানে জায়গা আছে সেখানে আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে পারি আর আমরা ভুক্তভোগীরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি তাহলে কোনভাবেই অসৎ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পারবো না। আজ হয়তো পেঁয়াজ কাল তেল-লবণ-চাল নিয়ে ও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়াতে, তাদের স্বার্থ আদায় করতে পিছপা হবে না। আর যদি আমরা শুধু ‘পেঁয়াজে বাংলা’ না হয়ে ‘জনগনে বাংলা’ হিসাবে সংগঠিত হই তাহলে এই সিন্ডিকেট নামক ‘জানোয়ারে বাংলা’ দের প্রতিহত করতে পারব। জয় হোক জনতার।
লেখক: জার্মানি প্রবাসী

ইনিউজ ৭১/এম.আর