বেশ কিছুদিন থেকে দফায় দফায় বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। তবে আজও পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কোনো সুখবর দিতে পারলেন না বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বরং তিনি বলেছেন, পেঁয়াজের বাজারদর স্বাভাবিক হতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। সোমবার (৪ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিবলেট। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমাদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে করে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আজ চট্টগ্রামে একটা ফুল টিম গেছে। একজন উপসচিবকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। খাতুনগঞ্জে গিয়ে তারা বাজার মনিটরিং করছেন। সবদিক দিয়েই আমরা দেখাছি।’ ‘তবে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অথবা আমাদের নিজস্ব পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত আর আমদানির বড় লট না আসা পর্যন্ত বাজারটা একটু চড়া-ই থাকবে। আমরা আশা করছি আগামী ১০, ১২ নভেম্বরের মধ্যে আমদানির বড় লটটা এসে পৌঁছাবে। ইতোমধ্যে ১০ হাজার টন লটের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ৫০ হাজার টনের লটটা আসতে শুরু করবে। তখন বাজার তার কিছুটা প্রভাব পড়বে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বেঙ্গালুরু থেকে ৯ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে। তবে ভারতের যে অঞ্চল থেকে আমাদের পেঁয়াজ আসে সেই নাসিক থেকে নিষেধাজ্ঞা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। আমরা যোগাযোগ করছি, তারা যেন নিষেধাজ্ঞাটা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন বাজারে পেঁয়াজের দামের প্রভাব থাকবে বলেও জানান তিনি। বলেন, আমাদেরও একটা আর্লি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। তবে এখনও সেই আকারে ওঠেনি, এ মাসের শেষ দিকে নিজস্ব পেঁয়াজ উঠবে।
টিপু মুনশি বলেন, এস আলম গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ ১০ থেকে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে। তা ইতোমধ্যে জাহাজে উঠে গেছে, যেকোনো সময় তা দেশে পৌঁছে যাবে। আর এস আলম ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আনার পরিকল্পনা করেছে, সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে তা দেশে আসবে। গতকাল মিয়ানমার থেকে এক হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। মিয়ানমারই আমাদের সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের তিন থেকে চার হাজার টন পেঁয়াজ দেশে ঢোকা দরকার, আমাদের দৈনিক চাহিদা ছয় হাজার টন। সব পেঁয়াজ তো বাইরে থেকে আসবে না, কিছু পেঁয়াজের উৎপাদন আমাদের রয়েছে। আর বাইরের মার্কেট থেকে পেঁয়াজ ঢুকছে। আশাকরি দুই-একদিনের মধ্যে আরও ভালো রিপোর্ট পাব।
মিয়ানমার থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করে সেগুলো ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটার ব্যাপারে কনফিউশন রয়েছে। আমাদের কাছে যে রিপোর্ট রয়েছে তাতে দাম পড়েছে ৪১ থেকে ৪২ টাকা। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে এটা নাকি বেড়ে ৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সঠিক দামটা জানার জন্য আমরা লোক পাঠিয়েছি।’
‘এখানে একটা বড় ধরনের ইনফরমেশন গ্যাপ হয়ে যায়, সেটা হচ্ছে যেহেতু ডিউটি নেই তখন কাস্টমস একটা দর ধরেই ছাড় করে দেয়। ওই দামটা যদি ধরা হয়, তাহলে সেটা হবে ভুল তথ্য। এ জন্য আমাদের কর্মকর্তাদের জানতে বলেছি সঠিক দাম কত? যদি ৭০ টাকা হয়, তাহলে ঢাকা পর্যন্ত আসতে আসতে ৯০ টাকা হয়ে যাবে। যদি ৪০, ৪২ হয় তাহলে হয়তো ৬০ টাকা হবে। সঠিক হিসাব না পেলে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে রাজধানীর বাজারে দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজের বাজারে কারসাজির মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা করে গত চার মাসে ভোক্তাদের তিন হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) নামের একটি সংগঠন। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের মূল্য নৈরাজ্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।