বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে বাংলা সাহিত্যের অমর গ্রন্থ “মনসা মঙ্গল কাব্য” রচয়িতা, মধ্য যুগের বিখ্যাত কবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত ৫’শ ২৫ বছর বছরের ঐতিহ্যবাহী মনসা মন্দিরে দেবী মনসার বাৎসরিক পুজা রবিবার সকাল নয়টায় প্রথম পুজা অনুষ্ঠিত হয়ে বিকেলে পর্যন্ত কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দেবী মনসার পুজা। মন্দির আঙ্গিনায় আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উদ্যেশ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও আওয়ামী লীগ নেতা অজয় দাস গুপ্ত, উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবুদর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল দাসসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
মন্দিরের পুরোহিত রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী ও কাজল চক্রবর্ত্তী জানান, “ধর্ম যার যার উৎসব সবার”-এ বাক্যকে বুকে ধারণ করে মহাকবি বিজয় গুপ্ত’র প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে জাতি, ধর্ম, বর্নের দেশ-বিদেশের হাজার হাজার শিশু ও নারী পুরুষ ভক্ত ও পূন্যার্থীরা তাদের মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ায় পূষ্পার্ঘ্য ও মানত নিয়ে মন্দিরে সমবেত হয়ে পুজা অর্চনা, ছাগ বলিদান, যাগযজ্ঞ, প্রার্থনা শেষে দুধ-কলা ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক মতে, ৫শ ২৫ বছর আগে মধ্য যুগে সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্বকালে তার রাজ দরবারের কবি বিজয় গুপ্ত ইংরেজী ১৪৯৪ সনে নিজ বাড়িতে মনসা দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজা অর্চণা শুরু করেন। এর পর থেকে এই মনসা মন্দিরসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে মনসা পুজার প্রচলন শুরু হয়। পঞ্জিকা মতে, শ্রাবণ মাসের শেষ দিনে সাপের দেবী মনসার পুজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
বিজয় গুপ্তর জন্ম তারিখ সম্পর্কে সুস্পস্ট জানা না গেলেও গবেষকদের ধারণা মতে, সম্ভবত ৭০ বছর বয়সে ১৫২০ খ্রিষ্টাব্দে কাশী ধামে বিজয় গুপ্ত দেহত্যাগ করেন। বিজয় গুপ্ত রচিত মনসা মঙ্গল বা পদ্মপুরাণ কাব্যে সর্বপ্রথম ইংরেজী দিন, তারিখ ও সনের লিপিবদ্ধ করায় তাকে রাজ দরবারে ‘মহাকবি”র উপাধী প্রদান করেছিলেন সুলতান হোসেন শাহ্। মহাকবি বিজয় গুপ্তর পিতার নাম সনাতন গুপ্ত ও মাতার নাম রুক্সিনী দেবী। বরিশাল জেলা প্রশাসন- জেলার দর্শনীয় স্থানের তালিকার শীর্ষে রেখেছে ঐতিহাসিক বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দিরের নাম। সারা বছর জুরে দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থী, শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পর্যটনের উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে রয়েছে এ মন্দিরের স্বীকৃতি। অন্যদিকে রাজিহার গ্রামে (চলাইরপাড়) মনসা সাধু নামে খ্যাত সুখদেব বিশ্বাসের বাড়ি প্রতিষ্ঠিত মনসা মন্দিরে পূজার আগের দিন বিকেল থেকে রাত জেগে দিনব্যাপি সুকদেব সাধুর অনুগত দেশ বিদেশের হাজার হাজার শিষ্য ও ভক্তরা জরো হয়ে বিভিন্ন বাদ্য বাজনা বাজিয়ে সর্পের দেবী মনসার বাৎসরিক পুজায় অংশ গ্রহন করে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।