বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত হত্যার রেশ না কাটতেই আরেক নৃশংস ঘটনা ঘটল। চট্টগ্রাম মহানগরের আকবর শাহ থানা এলাকায় যুবলীগকর্মী মোহাম্মদ মহসিনকে (২৬) প্রকাশ্যে বেধড়ক পিটিয়েছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। গত রবিবার বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে নৃশংস এ ঘটনাটি ঘটে। পরে ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় অভিযানে চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মহসিনকে ধাওয়া করে একটি গলিতে নিয়ে আসে সন্ত্রাসীরা। কিরিচ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী দ্রুত ঘিরে ফেলে তাঁকে। মুহূর্তের মধ্যে লাঠিসোঁটা নিয়ে মহসিনের ওপর হামলে পড়ে তারা। লাঠিপেটা শুরুর পর সড়কে পড়ে যান মহসিন। সেখানে তিন-চারজন মিলে ‘সাপ’ মারার মতো লাঠিপেটা করতে থাকে তাঁকে। এ সময় মহসিনের পা ধরে রাখে একজন। দুই হাত উঁচিয়ে বাঁচার আকুতি জানানোর মধ্যেই চলতে থাকে সন্ত্রাসীদের বীভৎস লাঠিপেটা। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার সময় একজন সড়কে পড়ে থাকা মহসিনের অর্ধমৃত শরীরে সজোরে লাথি মারে।
ঘটনাস্থলে একটি সিসি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরায় পিটুনির পুরো দৃশ্য ধরা পড়ে। ভিডিও ফুটেজের তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ আটজনকে শনাক্ত করে। এ ঘটনায় মহসিনের পরিবার গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত মামলা না করায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। গত রবিবার রাতেই অভিযানে চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. সাজু (২৪), মো. তারেক (১৮), মো. বেলাল হোসেন (২০), মোহাম্মদ মিরাজ (১৮) ও মো. মাসুদ (১৮)। ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, মারার সময় মহসিনের পা ধরে রাখা সন্ত্রাসীর নাম জুয়েল। শনাক্ত হওয়া অন্য সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছে খোকন, রাব্বী, ফারহান ও তুহিন। মহসিন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানায়, আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি এলাকার সেভেন মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সঙ্গে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের অনুসারীরা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোরশেদ কচি অভিযোগ করেন, কাউন্সিলরের অনুসারীরা ভয়ংকর কায়দায় মহসিনকে পিটিয়েছে।
পুলিশ জানায়, আকবর শাহ থানা এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম ও সরওয়ার মোরশেদ কচির মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার করতেই দুই পক্ষের বিরোধ। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই যুবলীগকর্মী মহিসনকে পেটানো হয়েছে। তাঁকে পেটানোর ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পরপরই সরওয়ার মোরশেদ কচির পক্ষের লোকেরা মিছিল বের করে। ঘটনা সম্পর্কে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মহসিনের সহযোগীরাই তাকে পিটিয়েছে। এর সঙ্গে আমার কর্মীরা জড়িত নয়। মহসিন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে।’ আকবর শাহ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানার উপপরিদর্শক এমদাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার আসামিদের মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে। জানা গেছে, মহসিন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।