ইসরায়েলে গিয়ে ইয়াহুদী হয়েছেন ঢাকায় রেল ভবনের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) মাে. শামসুজ্জামানের প্রবাসী ছেলে, এতে তাকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচারের শঙ্কায় কানাঘুষা শুরু হয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিওতে তাকে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণার পাশাপাশি ইসরাইলের ভূয়সী প্রশংসাও করতে দেখা গেছে। ওই ভিডিওতে নিজেকে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ইসরাইল সফরকারী ও দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কথাও বলেছেন তিনি। কুলাউড়া দুর্ঘটনার পর ওই এডিজির ছেলে ইসরাইল কানেশনের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর থেকেই এটি নিছক শোনাে ঘটনা নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
সূত্র জানায়, সাদমান জামান এরই মধ্যে ধর্ম ত্যাগ করে ইহুদীবাদে অনুরক্ত হয়েছেন। সে ঘােষণাও তিনি নিজের ভিওিতে দিয়েছেন। এমনকি নিজের সঙ্গে ইসরাইলীয় কতৃপক্ষের বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কে কথাও বলেছেন। ভটি বে এসব বিষয় জানাজানি হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারাও জানতে পারেন। তবে তার বাবা এডিজি শামসুজ্জামান বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই বলে বিভিন্ন সময়ে দাবি করে আসছেন। শামসুজ্জামান ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তাগের কথা বললেও বরাবরই তিনি ছেলের সঙ্গে যােগাযােগ রেখে চলেন। এমনকি নিজের অর্থ-সম্পদও লন্ডনে ছেলের নামে করেছেন।
অবশ্য রেলওয়ের ডিজি ( রেলিং স্টোকস) মো. শামসুজ্জামান এই প্রতিবেদকে বলেন, তার ছেলে সাদমান জামান একজন চিকিৎসক। ছেলে যেহেতু তার, যােগাযােগ তো থাকবেই। প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে কি করলো-সে দায় তার নয়। তবে তিনি সাদমানের ইসরাইলের সঙ্গে যােগাযােগকে সমর্থন করেন না। তবে নিজের অর্থ সম্পদ ছেলের নামে করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শামসুজ্জামান প্রায় বছর লন্ডন গিয়ে ছেলের কাছে থাকেন। সেখানে তার ছেলের একটি বিলাশবহুল একটি বাড়ি রয়েছে এবং দুটি দামী গাড়িও রয়েছে। শামসুজ্জামান রেলের এডিজি পদে থাকলেও গোপনে তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করেন। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই রেলের বগিসহ বিভিন্ন কেনাকাটাও করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে নিজের পরিচিত একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেলের বগিও আমদানী করেন তিনি। এ খাত থেকে তার মতাংশ লন্ডনে ছেলের মাকাউন্টে পাঠানাে হয়। এ ছাড়াও দুই ঠিকাদারকে রেলের কেনাকাটায় সুযােগ করে দেওয়ায় তিনি অর্থনৈতিক সুবিধাও পেয়ে আসছেন। তার অংশের টাকা ইন্দোনেশিয়া, হংকং, দুবাই ও চীনের বিভিঃ আকাউন্টে পাচার করা হয়।
জানতে চাইলে এডিজি শামসুজামান বলেন, তিনি সরকারী চাকরি করেন। তার সঙ্গে কারাে গোপন ব্যবসা নেই। বিদেশের কোনো আকাউন্টে টাকাও নেই। ছেলের কি আছে তা তার জানার কথাও নয়। গোয়েন্দাদের তথ্যের সূত্র ধরে ইউটিউবে সাদমান জামানের কয়েকটি ভিডিও পাওয়া যায়। এর একটিতে তাকে বলতে শুনা যায়, তিনি বাংলাদেশে বেড়ে উঠেছেন। ওই সময় তাকে জানানাে হয়েছিল, ইসরাইল ফিলিস্তিনের উপর অত্যাচার করছে। কিন্তু তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ইসরাইল সফর করে দেখেছেন, দেশটি খুব সুন্দর এবং এখানকার মানুষও ভালাে। তিনি ইসরাইলে প্রবেশের অপরাধে হয়তাে আর দেশে ফিরতে পারবেন না। দেশে ফিরলে তার বিচারের মুখােমুখি হতে হবে এমনকি সিও হতে পারে। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সমালােচনা করে বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকাটা দুঃখজনক। এক পর্যায়ে তিনি নিজের বাংলাদেশী পাসপাের্টও ওই ভিডিওতে দেখান।
আরও যেসব অভিযোগ শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে: রেলের এডিজি শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে শুধু তথ্য পাচার নয়, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আদায়, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, এডিজি শামছুজ্জামানের দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু রয়েছেন। গত ৪-৫ বছর ধরে তারাই রেলের সব কোচ সরবরাহের টেন্ডার জিতছেন। ওই দুজনকে কাজ পাইয়ে দিয়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে লন্ডনে ছেলেকে একটি বাড়ি ও দুটি অভিজাত গাড়ি কিনে দিয়েছেন। লন্ডনে ছেলে সাদমানের নামে আরও সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে। যার উৎস বাবা এডিজি শামছুজ্জামান। গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, শামছুজ্জামানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আফসার বিশ্বাস (বিশ্বাস কন্সট্রাকশন ও বাঁধন এন্টারপ্রাইজের মালিক)। ২০১৬ সাল থেকে তারই যোগসাজশে বিশ্বাসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ইন্দোনেশিয়ার পিটি-ইনকা’ রেলের টেন্ডার পাচ্ছে। এছাড়া শামছুজ্জামানের আরেক বন্ধু এ টি এম জাফরুল হাসান ডন। তিনি মেগাটেক জিএনবিডি, ঢাকার প্রধান উপদেষ্টা। শামছুজ্জামানের রেফারেন্সে রেলের বগি সরবরাহের বড় একটি কাজ পায় প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, আফসার ও ডন শামছুজ্জামানের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন। ওই দুজন টেন্ডার দুর্নীতির টাকা শামছুজ্জামানকে না দিয়ে সরাসরি তার ছেলের লন্ডনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন। গোয়েন্দারা সাদমানের অ্যাকাউন্টে ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, হংকং, চীন ও সিঙ্গাপুরের কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের তথ্য পেয়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। ইসরায়েলে বসবাসরত ছেলের সঙ্গে লন্ডনে গিয়ে সরকারি তথ্য পাচার ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে মো. শামছুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। রোববার প্রায় ১০ বার তার সরকারি মোবাইল ফোনে কল দেয়া হয় কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। সরাসরি অ্যাপয়েনমেন্ট চেয়েও পাওয়া যায়নি। পরে রেল ভবনে তার দফতরে গেলে তিনি তার সহকারী পাঠিয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি এখন মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। কোনো কথা থাকলে আগামী সপ্তাহে বলবেন। বারবার রেলওয়ের টেন্ডার পাওয়ার বিষয়ে জানতে ‘বিশ্বাস কন্সট্রাকশন’ ও ‘বাঁধন এন্টারপ্রাইজ’র মালিক আফসার বিশ্বাসের ব্যক্তিগত দুটি মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।